‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দদ্বয় সংবিধানে কী থাকবে? সোমে ‘সুপ্রিম’ শুনানি

Supreme Court Waqf law stay

ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ১৯৭৬ সালে সংযোজন করা ‘সমাজতান্ত্রিক’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘অখণ্ডতা’ শব্দগুলি নিয়ে ফের আলোচনায় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India)। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার (Sanjeev Khanna) নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সম্প্রতি এই সংশোধনীর বৈধতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। বেঞ্চের মতে, জরুরি অবস্থার সময়ে করা ইন্দিরা গান্ধী সরকারের ওই পদক্ষেপগুলিকে একেবারে খারিজ করে দেওয়া যায় না। । ২৫ নভেম্বর মামলার রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

Advertisements

১৯৭৫-৭৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়ে ইন্দিরা গান্ধী সরকার সংবিধানের ৪২তম সংশোধনী এনে প্রস্তাবনায় তিনটি শব্দ যুক্ত করে। ফলে, ভারতের সংবিধান যে আদতে ‘সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’, তা হয়ে যায় ‘সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। তবে, এটি রাজনৈতিক ও আইনগত দিক থেকে বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানায়, ১৯৭৬ সালের সংশোধনী এবং তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আগেও বিচারবিভাগ বিশদে পর্যালোচনা করেছে। বেঞ্চের মতে, জরুরি অবস্থার সময়ে করা প্রতিটি পদক্ষেপকে অবৈধ বলা যায় না।

Advertisements

এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বেঞ্চ মূলত ইঙ্গিত দেয় যে, প্রস্তাবনায় শব্দগুলির সংযোজন দেশের সাংবিধানিক কাঠামো বা মৌলিক নীতির পরিপন্থী নয়। বরং, এটি রাষ্ট্রের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রকৃতিকে আরও সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে।

সংশোধনীর মাধ্যমে সংযোজিত ‘সমাজতান্ত্রিক’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি ভারতীয় রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির এক ঐতিহাসিক ভিত্তি স্থাপন করে।এই শব্দটি সংবিধানে যুক্ত হওয়ার  ফলে রাষ্ট্রের লক্ষ্য নির্ধারণ হয় এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে সম্পদ, সুযোগ এবং অধিকার সমানভাবে বন্টিত হবে। এই শব্দটি নিশ্চিত করে যে, ভারত কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হবে না। রাষ্ট্র সমস্ত ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করবে এবং কোনও ধর্মীয় আচরণে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থাকবে না।

বেঞ্চের মন্তব্যে বিভিন্ন আইনজীবী এবং সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা দ্বিমত পোষণ করেছেন। একাংশের মতে, প্রস্তাবনায় এই শব্দগুলি সংযোজন দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে, আরেক অংশ মনে করে, এই পরিবর্তন দেশের আদর্শগত ভিত্তিকে রাজনীতির হাতিয়ার করেছে।