শ্রীনগর, ১৯ অক্টোবর: সীমান্তে বাড়তে থাকা নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় সেনার হাতে যুক্ত হয়েছে এক নতুন প্রযুক্তি—রোবটিক মিউল। জম্মুর অখনুর সেক্টরে প্রথমবারের মতো এই আধুনিক যন্ত্রকে ব্যবহার করে টহল, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং নজরদারি চালানো হচ্ছে। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, “অপারেশন সিন্দুর”-এ এই রোবটের সাফল্যের পর এটিকে এখন নিয়মিত টহল ব্যবস্থার অংশ করা হয়েছে।
সেনার পাশে প্রযুক্তির হাত
রোবটিক মিউল দেখতে অনেকটা যান্ত্রিক খচ্চরের মতো। এটি চারপাশে ভারী মালপত্র বহন করতে পারে, দুর্গম পাহাড়ি পথে সেনাদের জন্য সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে পারে, আবার বিশেষ সেন্সরের মাধ্যমে সন্দেহজনক নড়াচড়ারও খোঁজ রাখতে পারে। সেনাদের ভাষায়, “এটি আমাদের জন্য শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং এক নির্ভরযোগ্য সহযোদ্ধা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোবটিক মিউল মূলত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির এক আধুনিক রূপ। আগে যেখানে সেনাদেরকে নিজেদের কাঁধে ভারী সরঞ্জাম টেনে নিতে হত, এখন এই রোবটিক ডিভাইস সেই দায়িত্ব অনেকটা ভাগ করে নিচ্ছে। ফলে সৈন্যরা শারীরিকভাবে কম ক্লান্ত হচ্ছেন এবং টহল ও নজরদারিতে আরও মনোযোগী হতে পারছেন।
নজরদারিতে নতুন মাত্রা
অখনুরে সীমান্ত বরাবর সেনারা সবসময়ই সতর্ক থাকেন, কারণ এই অঞ্চল অনুপ্রবেশের জন্য সংবেদনশীল। সেনারা জানিয়েছেন, রোবটিক মিউল বিশেষভাবে সহায়ক রাত্রিকালীন নজরদারিতে। এর উন্নত ক্যামেরা ও সেন্সর সীমান্তে ছোটখাটো নড়াচড়াও চিহ্নিত করতে পারে।
সেনার এক অফিসার বলেন, “অপারেশন সিন্দুর”-এর সময় আমরা দেখেছিলাম কীভাবে রোবটিক মিউল মালপত্র বহন থেকে শুরু করে নজরদারিতে আমাদের সাহায্য করেছে। এখন এটি সীমান্তের প্রতিদিনের দায়িত্বে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের টহল অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ হচ্ছে।”
স্থানীয়দের আস্থা
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারাও বলছেন, সেনার এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তাঁদের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত হচ্ছে। গ্রামবাসীর কথায়, “আমরা প্রতিদিন দেখি সেনারা কতটা পরিশ্রম করেন আমাদের রক্ষা করতে। এখন প্রযুক্তির এই ব্যবহার তাঁদের কাজকে সহজ করবে, আর আমাদেরও মনে আরও ভরসা দেবে।”
প্রতিরক্ষায় নতুন দিগন্ত
ভারতীয় সেনা সবসময়ই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে এসেছে। ড্রোন, সেন্সর-ভিত্তিক ক্যামেরা, নাইট ভিশন ডিভাইসের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের পর এবার রোবটিক মিউল সেই ধারাকে আরও সমৃদ্ধ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যুদ্ধক্ষেত্রে বা সীমান্তে এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রই বড় ভূমিকা নেবে।
জম্মু-কাশ্মীরের অখনুর সীমান্তে রোবটিক মিউলের উপস্থিতি প্রমাণ করছে, ভারতীয় সেনা শুধু মানবসম্পদে নয়, প্রযুক্তির দিক থেকেও ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। এটি কেবল সেনাদের কাজের গতি বাড়াচ্ছে না, বরং দেশের মানুষকেও দিচ্ছে এক নতুন আস্থা—সীমান্তের সুরক্ষা এখন আরও মজবুত হাতে।