Indian Army modernization plan
নয়াদিল্লি: ভারতের সেনাবাহিনী আজ এমন এক রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যা একদিকে তার শতবর্ষের যুদ্ধঐতিহ্যকে ধারণ করবে, অন্যদিকে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি করবে ভবিষ্যতের বাহিনী। এ রূপান্তর কেবল নতুন অস্ত্র বা প্রযুক্তির সংযোজন নয়-এটি পুরো যুদ্ধদর্শনের পুনর্গঠন।
‘ডেকেড অব ট্রান্সফরমেশন’ (২০২৩-২০৩২) নামের এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার প্রথম ধাপের ঘোষণা আসে ২৬ জুলাই বিজয় দিবসে, সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর ভাষণে। স্বাধীনতার ৭৯তম বর্ষে পা রাখা ভারতের জন্য এই পরিকল্পনা এক নতুন যুগের সূচনা। মূল স্তম্ভ—‘রুদ্র’, ‘ভৈরব’, ‘শক্তিবান’ ও ‘দিব্যাস্ত্র’—এই চারটি নতুন যুদ্ধ-ধারণা।
ভৈরব ব্যাটালিয়ন: ত্রাস সৃষ্টিকারী আঘাতদল
আগস্টের শেষ নাগাদ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে পাঁচটি ‘ভৈরব ব্যাটালিয়ন’। ‘ভৈরব’ নামটি যেমন দেবী-শক্তির ভয়ের প্রতীক, তেমনই এ ইউনিটগুলির মূল লক্ষ্য হবে শত্রুপক্ষের মনে ত্রাস সৃষ্টি করা।
এরা হবে একপ্রকার বিশেষ বাহিনী, কিন্তু এলিট স্পেশাল ফোর্সের মতো কৌশলগত গভীর মিশনের বদলে, দায়িত্ব নেবে দ্রুত ও আকস্মিক আঘাত, সীমান্তপারের রেইড, শত্রুর রসদ ও যোগাযোগ ব্যাহত করা, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ‘শক-অ্যান্ড-অ’ কৌশল প্রয়োগ করা। এর ফলে সেনার মূল স্পেশাল ফোর্স ইউনিটগুলি জটিল ও উচ্চ অগ্রাধিকার মিশনের জন্য মুক্ত থাকবে।
ড্রোন যুদ্ধের বিস্তার Indian Army modernization plan
আগস্টের মধ্যেই প্রতিটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নে যুক্ত হবে একটি করে ড্রোন প্লাটুন। এটি ভারতীয় সেনার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বড় পরিবর্তন—যেখানে গোয়েন্দা নজরদারি, রিয়েল-টাইম টার্গেট ট্র্যাকিং ও দ্রুত আঘাত, সবকিছুতেই ড্রোনকে সামনে রাখা হচ্ছে।
একইসঙ্গে আর্টিলারি ইউনিটে যুক্ত হচ্ছে ‘দিব্যাস্ত্র’ ব্যাটারি ও লয়টারিং মিউনিশন ব্যাটারি। আর্মি এয়ার ডিফেন্সে আসছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।
রুদ্র ব্রিগেড: সর্বাঙ্গীণ যুদ্ধের প্রতীক
‘রুদ্র’ ব্রিগেড ভারতীয় সেনার এক নতুন পরীক্ষামূলক সাফল্য—যেখানে একই ইউনিটে থাকবে ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি ও আর্মার্ড কোর। অর্থাৎ, একই ব্রিগেড একসঙ্গে মানবশক্তি, গোলাবারুদ, ভারী কামান ও সাঁজোয়া যান—সবকিছুর সমন্বয়ে লড়তে পারবে।
ইতিমধ্যেই দুটি ব্রিগেডকে রুদ্র ব্রিগেডে রূপান্তর করা হয়েছে, যা সেনার মোতায়েন ক্ষমতা ও প্রতিক্রিয়ার গতি বহুগুণ বাড়াবে।
শক্তিবান ও দিব্যাস্ত্র: কামান থেকে কম্বো-অস্ত্র
দিব্যাস্ত্র ব্যাটারি: ঐতিহ্যবাহী কামানের সঙ্গে ড্রোন, লয়টারিং মিউনিশন ও প্রিসিশন-স্ট্রাইক প্রযুক্তির সমন্বয়। এগুলি শত্রুর গভীর এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম, পাশাপাশি রিয়েল-টাইম নজরদারিতে স্থির ও চলমান—উভয় লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারবে।
শক্তিবান ইউনিট: সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর, একচেটিয়া ড্রোন ও লয়টারিং মিউনিশনভিত্তিক আর্টিলারি ইউনিট। এদের কাছে প্রচলিত কামান থাকবে না, বরং লক্ষ্যকে ‘দেখে আঘাত’ (see-and-strike) করার ক্ষমতাই হবে প্রধান অস্ত্র।
অপারেশন সিঁদুর: রূপান্তরের প্রমাণ
সম্প্রতি পাহালগামে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ দেশ-বিদেশে আলোড়ন তুলেছে। আক্রমণাত্মক প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিরক্ষাতেও সেনা দেখিয়েছে সাফল্যের নজির। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ভারতীয় সেনা সীমান্তবর্তী সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং ভবিষ্যতের উচ্চপ্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে আরও ভয়ঙ্কর ও কার্যকর হয়ে উঠবে।
Bharat: Discover the Indian Army‘s ‘Decade of Transformation’ plan, including the new ‘Bhairav’ battalions. Learn how this modernization initiative is reshaping India’s military strategy with new warfare doctrines to meet modern battlefield demands and create a formidable force.