অরুণাচলের তুষার ঢাকা কামেং সেক্টরে অভিনব কীর্তি ভারতীয় সেনার

indian-army-high-altitude-monorail-arunachal-innovation

অরুণাচল প্রদেশের তুষার-ঢাকা উচ্চ হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় আবারও প্রমাণ করল ভারতীয় সেনা—পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, উদ্ভাবনই পারে সমাধান দিতে। ১৬,০০০ ফুট উচ্চতায় কামেং সেক্টরে ভারতীয় সেনার গজরাজ / ৪ কর্পস তৈরি করেছে একটি সম্পূর্ণ দেশীয়, হাই-অল্টিচিউড মনোরেল সিস্টেম। শুধু উদ্ভাবন নয়—এমন প্রায় অসম্ভব স্থানে এ সিস্টেমের সফল নির্মাণ নিজেই এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

Advertisements

হিমালয়ের কঠিন ভূপ্রকৃতিতে সেনা চৌকিগুলিতে পৌঁছনো সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় খাড়া পাহাড়, পাথুরে রাস্তাহীন পথ, তুষারপাত এবং হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সাপ্লাই পৌঁছনো দুঃসাধ্য হতে পারে।

   

বিহার হারের পর কংগ্রেসকে পরজীবী বললেন প্রধানমন্ত্রী

একইসঙ্গে জরুরি পরিস্থিতিতে আহত জওয়ানকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, কারণ অনেক সময় হেলিকপ্টার চরম খারাপ আবহাওয়া বা ভিজিবিলিটি সমস্যার কারণে নামতে পারে না। ঠিক এই জায়গাতেই সেনার নতুন মনোরেল সিস্টেমটি হয়ে উঠেছে ‘লাইফলাইন’।

বাংলাদেশি বা ইউরোপীয় পাহাড়ি অঞ্চলের কেবলকারের মতো দেখতে এই সিস্টেম মূলত এক ধরনের শক্তিশালী সিঙ্গেল-রেল মেকানিজম, যা ৩০০ কেজিরও বেশি মাল একবারে বহন করতে সক্ষম। খাবার, গোলাবারুদ, চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম সবই এখন এই মনোরেলের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে যেকোনও আবহাওয়ায়, দিন রাত নির্বিশেষে।

সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এটি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত। পাহাড়ি এলাকা অনুযায়ী বিশেষ নকশা করা হয়েছে, যাতে কম বিদ্যুৎব্যবহারে, কম রক্ষণাবেক্ষণে এবং যেকোনও পরিবেশগত অবস্থায় এটি কার্যকর থাকে। সেনা কর্পসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই মনোরেল আমাদের লজিস্টিক্স ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আগে যে এলাকায় পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত, এখন তা মাত্র কয়েক মিনিটেই সম্ভব হচ্ছে।”

Advertisements

মনোরেল সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল—ক্যাসুয়ালটি ইভ্যাকুয়েশন বা আহত সেনাদের উদ্ধার। কোনও দুর্ঘটনা, ফ্রস্টবাইট, স্নো স্লাইড বা সংঘর্ষজনিত আঘাত—যেকোনও অবস্থায় আহত ব্যক্তিকে দ্রুত নিচে নিয়ে আসা সম্ভব হবে এই রেল ব্যবস্থার সাহায্যে। যেখানে আগে হেলিকপ্টার পৌঁছতে পারত না বা দেরি হতো, সেখানে এখন এই প্রযুক্তিই জীবন বাঁচাতে পারে।

স্থানীয় জওয়ানদের কাছেও এই ব্যবস্থা এক ধরনের মনোবল বৃদ্ধির মতো। তারা মনে করছেন, সেনা নেতৃত্ব তাদের নিরাপত্তা ও সুবিধাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত-চীন সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রযুক্তি শুধুই উদ্ভাবন নয়, বরং ভারতের সামরিক প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করার এক বড় পদক্ষেপ।

৪ কর্পসের কমান্ডাররা জানিয়েছেন, এবার এই মডেলটি অন্য বেশ কয়েকটি দুর্গম হিমালয় অঞ্চলেও চালুর পরিকল্পনা চলছে। বিশেষ করে তাওয়াং, সিয়াচেন ও লাদাখের কিছু উচ্চ-অঞ্চলের পোস্টে এটি ব্যবহার হতে পারে। এতে সেনার লজিস্টিক্স চেইন শুধু দ্রুতই হবে না, যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও হবে আরও নির্ভরযোগ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বজুড়ে সেনাবাহিনীগুলি পাহাড়ি এলাকায় হালকা ও দ্রুতগতির লজিস্টিক্স ব্যবস্থার খোঁজ করছে। ভারতীয় সেনার এই মনোরেল সেই দিক থেকে ভবিষ্যতের সামরিক লজিস্টিক্স প্রযুক্তির দিশা দেখাতে পারে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি এবং কঠিনতম পরিবেশে পরীক্ষিত হওয়ায় এটি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগেরও বড় সাফল্য।

কামেং সেক্টরের বরফঢাকা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সেনার এই দেশীয় মনোরেল আজ শুধু একটি প্রযুক্তির কথা বলে না এটি বলে দৃঢ়তার, উদ্ভাবনের, এবং দেশের সুরক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প।