ভারতীয় বিমান বাহিনীর (Indian Air Force) সাউথ ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ডের এয়ার অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ (এওসি-ইন-সি) হিসেবে কর্মরত এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি আগামী ২ মে ২০২৫ থেকে বিমান বাহিনীর ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি এয়ার মার্শাল এস পি ধারকারের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি ৩০ এপ্রিল ২০২৫-এ অবসর গ্রহণ করেছেন। এয়ার মার্শাল ধারকারের অবসরের দিনে তাকে বিমান বাহিনীর সদর দফতর—বায়ু ভবনে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। এছাড়া, তিনি জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এয়ার মার্শাল ধারকার, যিনি একজন দক্ষ ফাইটার পাইলট, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিং-এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন, যিনি বর্তমানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন সিনিয়র কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা গেছে, এয়ার মার্শাল তিওয়ারি ২ মে থেকে ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
এয়ার মার্শাল তিওয়ারির কর্মজীবন
এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি ১৯৮৬ সালের জুন মাসে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফাইটার স্ট্রিমে কমিশন্ড হন। তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির (এনডিএ) প্রাক্তনী এবং প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডালিস্ট হিসেবে পাস করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের বিমান চালিয়েছেন এবং একজন যোগ্য ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর এবং এক্সপেরিমেন্টাল টেস্ট পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পূর্ববর্তী বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিওয়ারির ফিল্ড অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ, বিশেষ করে মিরাজ-২০০০ বিমানে বিভিন্ন অস্ত্র এবং সিস্টেমের অপারেশনাল টেস্টিংয়ে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি ১৯৯৯ সালের কার্গিল সংঘর্ষের সময় গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তিওয়ারি ২০২৩ সালের মে মাসে গান্ধীনগরে সাউথ ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ডের (এসডব্লিউএসি) এওসি-ইন-সি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই কমান্ডটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল ইউনিট, যা পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার নেতৃত্বে এই কমান্ড অপারেশনাল প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব
ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে এয়ার মার্শাল তিওয়ারির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিমান বাহিনীর অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান। তিনি এয়ার চিফ মার্শালের সঙ্গে কাজ করে বিমান বাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। ভারতীয় বিমান বাহিনী বর্তমানে তার যুদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন ফাইটার জেট ক্রয়, ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন, এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। এয়ার মার্শাল তিওয়ারির অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা এই প্রকল্পগুলির সফল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর বর্তমান প্রেক্ষাপট
ভারতীয় বিমান বাহিনী বর্তমানে পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে কাজ করছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর চীনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা এবং পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা বিমান বাহিনীর জন্য ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই প্রেক্ষাপটে, এয়ার মার্শাল তিওয়ারির নিয়োগ বিমান বাহিনীর নেতৃত্বে ধারাবাহিকতা এবং দক্ষতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার কার্গিল সংঘর্ষের অভিজ্ঞতা এবং অপারেশনাল টেস্টিংয়ে দক্ষতা তাকে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় একজন আদর্শ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এয়ার মার্শাল ধারকারের অবদান
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল এস পি ধারকার ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মেয়াদে বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং অপারেশনাল প্রস্তুতি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তার নেতৃত্বে বিমান বাহিনী নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জোরদার করেছে। অবসরের দিনে তাকে প্রদত্ত গার্ড অফ অনার এবং জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন তার প্রতি বিমান বাহিনীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের প্রতিফলন।
তিওয়ারির ভূমিকার প্রত্যাশা
এয়ার মার্শাল তিওয়ারির নিয়োগের ফলে বিমান বাহিনীর নেতৃত্বে নতুন গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার অভিজ্ঞতা এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি বিমান বাহিনীকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে। বিশেষ করে, ভারতের আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের অধীনে দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ফাইটার জেট ক্রয়ের মতো প্রকল্পে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারির ভাইস চিফ অফ এয়ার স্টাফ হিসেবে নিয়োগ ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তার বিশাল অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বিমান বাহিনীকে জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী করবে। কার্গিল সংঘর্ষে তার অংশগ্রহণ এবং মিরাজ-২০০০-এর অপারেশনাল টেস্টিংয়ে অবদান তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য আদর্শ প্রার্থী করে তুলেছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী তার নেতৃত্বে আধুনিকীকরণ এবং অপারেশনাল দক্ষতার নতুন মাইলফলক অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।