বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাকিস্তান জয়সলমের অঞ্চলে মিসাইল (Jaisalmer missile attack) হামলার চেষ্টা করলে ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সাড়া দেয়। অঞ্চলটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় করা হয়েছে এবং আগত হুমকিগুলো মোকাবিলা ও নিষ্ক্রিয় করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে থাকতেই ৭০টির বেশি মিসাইল ধ্বংস করেছে, ফলে স্থলভাগে কোনো ক্ষতি হয়নি। জয়সলমের এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে।
জানা গেছে, জয়সলমের অঞ্চলে তীব্র গোলাগুলি এবং একাধিক ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, যা লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধ্বংস করা হয়। এলাকার বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা এই সমস্ত আকাশ পথের হুমকি নিষ্ক্রিয় করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না হয়। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসভবনে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন, যেখানে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়। বৈঠকে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিচালক, গোয়েন্দা মহাপরিচালক এবং আইনশৃঙ্খলার অতিরিক্ত মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা
ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই ঘটনায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, জয়সলমেরের দিকে পাকিস্তান ৭০টির বেশি মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল, কিন্তু ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলো আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে দিয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “জয়সলমেরে পাকিস্তানের সমস্ত মিসাইল মারা পড়েছে, ভারত পাকিস্তানের হামলা ব্যর্থ করেছে।” এই ঘটনা ভারতের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং সামরিক প্রস্তুতির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
এই প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ জয়সলমের এয়ার ফোর্স স্টেশন এবং শ্রীনগর বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর উপর সম্ভাব্য হামলা রোধ করেছে। শ্রীনগর বিমানবন্দর বর্তমানে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে, এবং সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জম্মু এবং অন্যান্য এলাকার দিকে আগত সমস্ত হামলা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে। গত ৭ মে, ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর উপর মিসাইল হামলা চালায়, যা ২২ এপ্রিল পাহালগামে হিন্দু পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়েছিল। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিল। ভারত দাবি করেছে, তাদের হামলা লক্ষর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উপর কেন্দ্রীভূত ছিল, এবং কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করা হয়নি।
অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করেছে যে ভারতের হামলায় ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, এবং তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই হামলাকে ‘যুদ্ধের কাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন। জয়সলমেরে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক মিসাইল হামলার চেষ্টা এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
জয়সলমেরে ভারতের সফল প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ স্থানীয় জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারতীয় সেনা সব মিসাইল ধ্বংস করেছে। জয় হিন্দ!” তবে, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন। ভারতীয় পুলিশ ও চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রতিশোধমূলক গোলাগুলিতে অন্তত ৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং বেসামরিক জীবন রক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
জয়সলমেরে পাকিস্তানের মিসাইল হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করার মধ্য দিয়ে ভারত তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ দিয়েছে। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে আরও জটিল করলেও, ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দক্ষতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি জাতির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। তবে, সীমান্তবর্তী এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাস করা এখন অত্যন্ত জরুরি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই সাফল্য জাতির জন্য গর্বের বিষয়, তবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।