সীমান্তে গুলি বর্ষণে পাকিস্তানকে হটলাইনে সাবধান করল ভারত

India Warns Pakistan: ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালকরা (DGMO) মঙ্গলবার হটলাইনে আলোচনা করেছেন, যখন জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LoC) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অযাচিত…

India Warns Pakistan Over Fresh LoC Ceasefire Violations

India Warns Pakistan: ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালকরা (DGMO) মঙ্গলবার হটলাইনে আলোচনা করেছেন, যখন জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LoC) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অযাচিত গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ভারত এই আলোচনায় পাকিস্তানের অযাচিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করেছে এবং তাদের সতর্ক করেছে। এই আলোচনা পহেলগাঁওে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে।  এই ঘটনা পাকিস্তানের বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, কারণ ভারতের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য পাল্টা ব্যবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তানি সেনারা সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং কুপওয়াড়া জেলায় অযাচিত গুলি চালিয়েছে, যা এলওসি-তে তাদের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “২৭-২৮ এপ্রিল রাতে, পাকিস্তান সেনা পোস্টগুলি কুপওয়াড়া এবং পুঞ্চ জেলার বিপরীতে এলওসি-তে অযাচিত ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়।” ভারতীয় সেনারা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এর জবাব দিয়েছে। এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ছিল টানা চতুর্থ রাতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এলওসি-তে ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা, যা ২০২১ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর সবচেয়ে বড় আকারের সংঘর্ষ।

   

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওের বাইসারান মেডোতে সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের উপর হামলা চালায়, যাতে ২৬ জন নিহত হয়। এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারত পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে, এবং পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন পাকিস্তানের নাগরিক। এই হামলার পর থেকে পাকিস্তান গত ছয় রাত ধরে প্রতি রাতে এলওসি এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবারের ঘটনাটি জম্মু জেলার পারগোয়াল সেক্টরে আন্তর্জাতিক সীমান্তেও বিস্তৃত হয়েছে।

মঙ্গলবার ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই তাঁর পাকিস্তানি সমকক্ষের সঙ্গে হটলাইনে আলোচনা করেন। ভারত পাকিস্তানকে অযাচিত গুলিবর্ষণের জন্য সতর্ক করেছে এবং ২০২১ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তানকে অবশ্যই সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ করতে হবে। এই আলোচনা পাকিস্তানের ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তান ২০০৩ এবং ২০২১ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভিত্তি শিমলা চুক্তিকে স্থগিত করেছে, যা বর্তমান উত্তেজনাকে আরও জটিল করেছে।

পাকিস্তানের অযাচিত গুলিবর্ষণের জবাবে ভারতীয় সেনারা কুপওয়াড়া, পুঞ্চ, রাজৌরির নওশেরা এবং সুন্দরবনী সেক্টরে দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইন্ডিয়া টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৬৫ বছরের পুরনো ইন্দুস জল চুক্তি স্থগিত করা, আটারি স্থল সীমান্ত বন্ধ করা এবং পাকিস্তানি সামরিক অ্যাটাশেদের বহিষ্কার। এছাড়া, ভারত আটারি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা সব পাকিস্তানি নাগরিককে ১ মে-এর মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করেছে।

Advertisements

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী তাদের উড্ডয়ন ৫০ শতাংশের বেশি কমিয়েছে এবং শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক মিশনে সীমাবদ্ধ রেখেছে। ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, এবং সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সতর্ক করে বলেছেন, পাকিস্তানের উসকানি অব্যাহত থাকলে “যথাযথ জবাব” দেওয়া হবে।

এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত পোস্ট অনুযায়ী, এলওসি-তে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ইন্ডিয়া টুডের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান এলওসি-তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে; সীমান্ত গ্রামগুলোতে আবার ভয়ের পরিবেশ।” এই ঘটনাগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে।

পহেলগাঁও হামলার পর এলওসি-তে পাকিস্তানের ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ডিজিএমও হটলাইন আলোচনায় ভারতের কঠোর অবস্থান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ স্পষ্ট করে যে ভারত সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্ত লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছে। বিশ্লেষকরা সতর্কতা এবং কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়। সীমান্তে শান্তি পুনরুদ্ধার এবং সন্ত্রাসবাদ রোধে ভারতের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।