ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়েল আগামী সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য এই সফরে তিনি উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নেবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই সফরের লক্ষ্য হল ভারত-আমেরিকার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা এবং সাম্প্রতিক শুল্ক সংকটের সমাধান খুঁজে বের করা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে ভারতের রপ্তানি খাতে চাপ পড়েছে। পাশাপাশি, ভারতও আমেরিকার কিছু কৃষিজ ও শিল্পজাত পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
তবে এর মধ্যেই ইতিবাচক ইঙ্গিতও মিলছে। গত বুধবার নয়াদিল্লিতে মার্কিন প্রধান আলোচক ব্রেন্ডান লিঞ্চ এবং ভারতীয় প্রতিনিধি রাজেশ আগরওয়ালের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দিনভর চলা এই বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, আলোচনা ছিল গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ। দুই দেশই দ্রুত একটি পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদী।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি এই চুক্তি সম্পন্ন হয়, তবে তা দুই দেশের রপ্তানি-আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বিনিয়োগ খাতে নতুন দিশা দেখাবে। বিশেষ করে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা এবং কৃষি খাত আমেরিকায় আরও বড় বাজার পেতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে পীযূষ গয়েলের মার্কিন সফরকে ব্যবসা ও কূটনৈতিক মহলে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, তিনি ও তাঁর প্রতিনিধি দল আমেরিকার বাণিজ্য দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে শুল্ক হ্রাস, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির সুবিধা, ফার্মাসিউটিক্যাল অনুমোদন প্রক্রিয়া, ডিজিটাল বাণিজ্য, এবং প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেছেন, “ভারত ও আমেরিকা দু’দেশই বুঝতে পেরেছে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে হলে সমস্যাগুলি সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করতেই হবে। গয়েলের এই সফর সেই প্রচেষ্টারই অংশ।”
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক গত দশকে বহুগুণে বেড়েছে। বর্তমানে আমেরিকা ভারতের অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার। একইসঙ্গে, ভারতও আমেরিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ গন্তব্য হয়ে উঠছে। তাই এই সফর সফল হলে দুই দেশের অর্থনীতি আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হবে।
সব মিলিয়ে, আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের এই বৈঠককে ঘিরে প্রত্যাশা তুঙ্গে। ব্যবসায়ী মহল আশা করছে, গয়েলের মার্কিন সফরের মাধ্যমে শুল্কসংক্রান্ত অচলাবস্থা কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু হবে।