নয়াদিল্লি, ১৯ নভেম্বর: ভারতের রান্নাঘর থেকে শুরু করে স্কুলের ক্যান্টিন পর্যন্ত যেখানে যেখানে চোখ ফিরিয়ে তাকান, (Ultra Processed Foods) সেখানেই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের (ইউপিএফ) ছড়াছোঁয়া। চিপস, সোডা, প্রক্রিয়াজাত ইয়োগার্ট, ফ্রোজেন পিৎজা এই ‘সুবিধাজনক’ খাবারগুলোর বিক্রি ২০০৬ সালে মাত্র ০.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০১৯ সালে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে, অর্থাৎ ৪০ গুণ বৃদ্ধি।
এই বিস্ফোরক পরিবর্তনের ফলে দেশে মোটা-মোটা মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, ডায়াবেটিসের রোগী লক্ষ লক্ষ বেড়েছে। বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এর সাম্প্রতিক তিনটি গবেষণাপত্র এই সংকটকে সরাসরি যুক্ত করেছে ইউপিএফ-এর সঙ্গে, বলছে এটা একটা ‘জাতীয় স্বাস্থ্য বোমা’ যা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে।এই গবেষণায় ৪৩ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের অবদান রয়েছে।
নিলামের আগে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন নাইটদের এই তারকা
তারা বলছেন, ইউপিএফ যা চর্বি, চিনি, লবণ এবং কৃত্রিম অ্যাডিটিভে ভরপুর শুধু ওজন বাড়ায় না, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বিষণ্নতা এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ায়। ২০১৯-২১ সালের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপ (এনএফএইচএস-৫) অনুসারে, ২৯ শতাংশ ভারতীয় মোটা হয়ে গেছে অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন। প্রতি দশজনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, সাতজনের একজন প্রি-ডায়াবেটিসে।
আর পেটের চারপাশে চর্বি জমে ৪০ শতাংশ মানুষকে ‘অ্যাবডমিনাল ওবেসিটি’-র শিকার করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো শিশুদের অবস্থা। ২০১৫-১৬ সালে যেখানে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে মাত্র ২.১ শতাংশ মোটা ছিল, সেখানে ২০১৯-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩.৪ শতাংশে। এই বাচ্চারা বড় হয়ে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়বে এটা কোনো সাধারণ পরিবর্তন নয়, এটা একটা মহামারীর সূচনা।
এই সংকটের পেছনে কী? শহুরে জীবনের দৌড়ঝাঁপ, টিভি-মোবাইলের সামনে বসে খাওয়া, এবং সর্বত্র ছড়ানো ইউপিএফ-এর আকর্ষণ। দিল্লির একটি কলেজ ছাত্র রবি (১৮), যার ওজন ১২৫ কেজি, বলে, “বাড়ির খাবার বোরিং লাগে, তাই ফ্রোজেন পিৎজা গরম করে খাই। চিনি-চর্বির স্বাদে আসক্ত হয়ে গেছি।” তার মতো লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী এখন ‘মেটাবলিক ওবেসিটি’-র শিকার, যা অদৃশ্যভাবে ডায়াবেটিস এবং হাই কোলেস্টেরল ডেকে আনে।
গ্রামাঞ্চলেও এর ছড়াছোঁয়া পৌঁছে গেছে—পুরনো দিনের ডাল-ভাত-সবজির জায়গায় এখন প্যাকেটজাত চিপস এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস। ল্যানসেটের সহ-লেখক ড. অরুন গুপ্তা বলেছেন, “ভারতে ইউপিএফ-এর বিক্রি সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। আমাদের নিয়মকানুন মার্কেটিং রোধ করতে অক্ষম। এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, না হলে মোটা-ডায়াবেটিসের হার কমবে না।”


