ভারতের পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে আয়োজিত ১০ দিনের ত্রিসেনা মহড়া ঘিরে চরম সতর্কতা জারি করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের সেনা সদর দফতর থেকে দক্ষিণ পাকিস্তানের একাধিক কর্পস ও ঘাঁটিতে উচ্চ সতর্কাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ৩০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এমন এক যৌথ স্থল–নৌ–বিমান বাহিনীর মহড়ার জন্য Notice to Airmen (NOTAM) জারি করেছে। এই মহড়ার মূল ফোকাস সির ক্রিক–সিন্ধ–করাচি অক্ষ, যাকে পাকিস্তানি সূত্রগুলি “দেশের গভীর দক্ষিণাঞ্চল” হিসেবে বর্ণনা করছে।
‘গভীর দক্ষিণ’ নিয়ে আতঙ্ক ইসলামাবাদে
সূত্রের দাবি, এই মহড়ার ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়কাল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি করেছে। দক্ষিণ কমান্ড, বিশেষ করে সিন্ধ ও দক্ষিণ পাঞ্জাবের সেনা ইউনিটগুলি, বর্তমানে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। বিমান ও নৌবাহিনীকে জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বাহাওয়ালপুর স্ট্রাইক কর্পস ও করাচি কর্পস-এ। এছাড়া শোরকট, বাহাওয়ালপুর, রহিম ইয়ার খান, জ্যাকোবাবাদ, ভোলারি ও করাচি বিমানঘাঁটিকে স্ট্যান্ডবাই মোডে রাখা হয়েছে। আরব সাগরে টহল ও নৌ-অভিযানও জোরদার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে সূত্র।
মহড়ার কৌশলগত বার্তা India Tri-Services Exercise
গোয়েন্দা সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারত দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে মহড়া বেছে নিয়েছে মূলত স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বিত ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য। বাহাওয়ালপুর থেকে রহিম ইয়ার খান, থর মরুভূমি হয়ে স্যার ক্রিক পর্যন্ত এই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সমতল ও তুলনামূলকভাবে প্রতিরক্ষায় দুর্বল।
পাকিস্তানি সূত্রগুলি আশঙ্কা করছে, এই মহড়া ভারতের এমন সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে, যা করাচি ও এর উপকূলীয় অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার সম্ভাব্য ইঙ্গিত দেয়। পাকিস্তানের প্রায় ৭০ শতাংশ বাণিজ্য করাচি বন্দর ও বিন কাসিম পোর্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, ফলে ওই অঞ্চল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল।
অভ্যন্তরীণ চাপে পাকিস্তানের সেনা
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সঙ্কটও পাকিস্তানি সেনাকে চাপে রেখেছে। খাইবার–পেশোয়ার অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা দমনেই ইতিমধ্যেই বাহিনীর বড় অংশ নিয়োজিত। এই অবস্থায় বাইরের সীমান্তে নতুন চাপ তৈরি হলে, সামরিক সম্পদের ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের বক্তব্য
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অবশ্য এই মহড়াকে ‘রুটিন প্রস্তুতি অনুশীলন’ বলেই বর্ণনা করেছে। ভারতীয় সেনার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এমন যৌথ মহড়া প্রতি বছরই পরিচালিত হয়, যাতে ত্রিসেনার কার্যকরী প্রস্তুতি যাচাই করা যায়।
তবে সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাপ্রবাহ দেখায় কীভাবে বৃহৎ আকারের সীমান্ত-মহড়া কখনও কখনও রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্বেগের জন্ম দেয়, বিশেষ করে যখন প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তা পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই চাপে থাকে।


