নয়াদিল্লি: জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ব্রাজিলের কাছ থেকে ব্রিকসের (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে চলেছে ভারত এই ঘোষণা এসেছে কাজান সম্মেলনের পরেই। জি২০-র ঐতিহাসিক সাফল্যের পর এটি ভারতের কূটনৈতিক যাত্রার আরেকটি সোনালি অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “এটা শুধু সভাপতিত্ব নয়, এটা গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বরকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ।”
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সারা বছর ধরে দেশের ৬০টি শহরে মহাসমারোহে উদযাপন হবে—যেখানে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য এবং বিশ্বনেতৃত্বের ছোঁয়া থাকবে। এই উদ্যোগ শুধু কূটনৈতিক নয়, এটা ভারতের ‘বিশ্বগুরু’ রূপকে সামনে তুলে ধরার এক মহাকাব্যিক প্রয়াস।ব্রিকসের সভাপতিত্ব মানে এক বছরের জন্য গ্রুপের এজেন্ডা নির্ধারণ, সম্মেলন আয়োজন এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়।
২০২৬-এ ভারতের থিম হবে ‘ইনক্লুসিভ গ্রোথ অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফর গ্লোবাল সাউথ’। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ১০০-র বেশি ইভেন্টের পরিকল্পনা করেছি—যার মধ্যে মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং, বিজনেস ফোরাম, ইয়ুথ সামিট, কালচারাল ফেস্টিভ্যাল থাকবে।” কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো ৬০ শহরের উদযাপন।
দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো ছাড়াও গুয়াহাটি, ভুবনেশ্বর, লখনউ, জয়পুর, বারাণসী, অমৃতসর, হায়দরাবাদ, কোচি, ইন্দোর, পটনা, রাঁচি এমনকি ছোট শহর যেমন শিলং, আইজল, গ্যাঙ্গটক, পুদুচেরি, লেহ-লাদাখেও অনুষ্ঠান হবে। প্রতিটি শহর তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরবে। উদাহরণস্বরূপ, বারাণসীতে গঙ্গা আরতি ও যোগ-মেডিটেশন সেশন, জয়পুরে রাজস্থানী লোকনৃত্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শনী, কোচিতে কথকলি ও স্পাইস ট্যুর, গুয়াহাটিতে ব্রহ্মপুত্র উৎসব ও অসমের চা-সংস্কৃতি।
এই উদযাপনের মূলে রয়েছে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ধারণা। বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রক, পর্যটন মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। একটি কেন্দ্রীয় ‘ব্রিকস কালচারাল কমিটি’ গঠিত হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী সোনাল মানসিংহ এবং সঙ্গীতজ্ঞ এ আর রহমান। তারা বলেছেন, “আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই ভারত কেবল অর্থনীতি নয়, এটা এক জীবন্ত সভ্যতা।”
প্রতিটি শহরে ‘ব্রিকস ভিলেজ’ তৈরি হবে, যেখানে ব্রিকস দেশগুলোর স্টল থাকবে রাশিয়ার ম্যাট্রিওশকা পুতুল, চীনের সিল্ক, ব্রাজিলের কফি, দক্ষিণ আফ্রিকার ডায়মন্ড জুয়েলারি এবং ভারতের হস্তশিল্প, মশলা, চা, যোগ। স্কুল-কলেজে ‘ব্রিকস কুইজ’, ‘মডেল ব্রিকস সামিট’, আর্ট কম্পিটিশন হবে। ইতিমধ্যে ৫০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ‘ব্রিকস ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম’ শুরু হয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে এই সভাপতিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিকস এখন বিশ্বের জিডিপি-র ৩৭ শতাংশের মালিক, জি৭-কে ছাড়িয়ে। ভারতের সভাপতিত্বে ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক’-এর মাধ্যমে ৫০ বিলিয়ন ডলারের নতুন প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে বিশেষ করে সৌরশক্তি, এআই, স্পেস টেকনোলজিতে।
মোদী সরকার ‘ডি-ডলারাইজেশন’-এর পক্ষে অর্থাৎ ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য। ইতিমধ্যে ভারত-রাশিয়া রুপি-রুবল ট্রেড শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠন সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট সঞ্জীব বাজাজ বলেন, “এটা ভারতীয় এমএসএমই-দের জন্য সোনার সুযোগ। আমরা ব্রিকস দেশগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা রেখেছি।”
