India 2027 Census: দীর্ঘ ১৬ বছর পর অবশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করল—২০২৭ সালের ১ মার্চ থেকে দেশজুড়ে শুরু হতে চলেছে পরবর্তী জনগণনা। বুধবার সরকারি সূত্রে এই খবর নিশ্চিত হয়েছে। ২০১১ সালের পর আর কোনও জনগণনা হয়নি। ২০২১ সালের নির্ধারিত জনগণনা করোনা অতিমারির কারণে স্থগিত হয়ে যায়। ফলে এই নতুন জনগণনাই হবে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতিতে অনুষ্ঠিত গণনা।
তবে সব রাজ্যে একসাথে নয়, বরফাবৃত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে এই জনগণনা শুরু হবে আরও আগেই—২০২৬ সালের অক্টোবর থেকেই। এই তালিকায় থাকছে লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড। কঠিন আবহাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে এগুলিতে আগাম শুরু করা হবে প্রক্রিয়া।
দুটি ধাপে চলবে প্রক্রিয়া
এই জনগণনা হবে দুটি ধাপে। প্রথম ধাপে হবে হাউসলিস্টিং ও জনসংখ্যা নিরূপণ এবং দ্বিতীয় ধাপে সংগ্রহ করা হবে জাতিগত ও সামাজিক-অর্থনৈতিক তথ্য। সর্বভারতীয় এই গণনায় এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে চলেছে জাতি ও উপ-জাতি সংক্রান্ত প্রশ্নপত্র।
জাতি ও উপজাতির তথ্য অন্তর্ভুক্তি: বড় রাজনৈতিক বার্তা
এই বছরের ৩০ এপ্রিল সরকার নিশ্চিত করেছে, এই জনগণনায় জাতি ও উপজাতি সম্পর্কিত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি জাতি ও উপজাতির নাম, সংখ্যা ও বণ্টন বিশদভাবে নথিভুক্ত করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলগুলি এই জাতি নির্ভর গণনার দাবি জানিয়ে আসছিল। বিশেষ করে বিহারের মতো রাজ্যে, যেখানে ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ ‘অত্যন্ত পশ্চাৎপদ’ বা ‘পশ্চাৎপদ’ শ্রেণির মধ্যে পড়ে, সেখানে এই তথ্য রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত অনেকেই দেখছেন আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে।
জনগণনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জনগণনা হল দেশের জনসংখ্যার সঠিক চিত্র পাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়। এর মাধ্যমে জানা যায় মানুষের সংখ্যা, বসবাসের ধরন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাসস্থান, জল-বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রভৃতি। এবার তাতে যুক্ত হচ্ছে জাতিগত গঠন, যা সামাজিক নীতিনির্ধারণে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
বিরোধী দলগুলির মতে, বর্তমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে এবং সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণে নতুন জনগণনা একান্ত প্রয়োজনীয়। অনেক রাজ্য ইতিমধ্যেই নিজস্বভাবে জাতি নির্ভর সমীক্ষা চালিয়েছে—বিহার, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র তার উদাহরণ। কিন্তু সেগুলি জাতীয় স্তরে মান্যতা পায়নি।
ডিজিটাল মাধ্যমে হতে পারে প্রথমবার
সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এই প্রথমবার জনগণনার কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। নাগরিকরা মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে তথ্য আপলোড করতে পারবেন। এতে তথ্য সংগ্রহ হবে আরও দ্রুত এবং নির্ভুল।
ভারতের ইতিহাসে এই ২০২৭ সালের জনগণনা হতে চলেছে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শুধু সংখ্যার হিসেব নয়, দেশের সমাজ কাঠামোর গভীর বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ নীতিগত পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে চলেছে এই গণনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতের গণতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।