ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং রয়্যাল থাই আর্মি আগামী (Military Exercise)১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত মেঘালয়ের উমরোইয়ে অবস্থিত ফরেন ট্রেনিং নোডে যৌথ দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া ‘মৈত্রী’র ১৪তম সংস্করণ পরিচালনা করতে চলেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাবলিক ইনফরমেশন) বা এডিজি পিআই-এর তরফে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এই মহড়াটি উভয় দেশের সেনাবাহিনীর অপারেশনাল ক্ষমতাকে আরও তীক্ষ্ণ করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত, বিশেষ করে রাষ্ট্রসংঘের ম্যান্ডেটের অধীনে আধা-শহুরে পরিবেশে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে। এই মহড়া বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি উভয় দেশের যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।
‘মৈত্রী’ মহড়াটি ২০০৬ সাল থেকে ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বার্ষিকভাবে পর্যায়ক্রমে দুই দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সালে এই মহড়ার শেষ সংস্করণ মেঘালয়ের উমরোইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে কিছু বছর বিরতি দেওয়ার পর, ২০২৪ সালে থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশে এই মহড়া পুনরায় শুরু হয়।
এডিজি পিআই-এর একটি ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাঁচ বছর পর এই মহড়া আবার ভারতে ফিরে আসছে, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার প্রতীক।
এই মহড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো জঙ্গল ও শহুরে পরিবেশে সন্ত্রাসবিরোধী এবং বিদ্রোহী-বিরোধী অভিযানে যৌথ কৌশলগত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উভয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা। মহড়ার সময় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
যার মধ্যে রয়েছে যৌথ অপারেশন সেন্টার স্থাপন, গোয়েন্দা ও নজরদারি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, ড্রোন ও কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেমের ব্যবহার, ল্যান্ডিং সাইট সুরক্ষিত করা, ছোট দলের সন্নিবেশ ও উদ্ধার, বিশেষ হেলিবোর্ন অপারেশন, কর্ডন অ্যান্ড সার্চ অপারেশন, রুম ইন্টারভেনশন ড্রিল এবং অবৈধ কাঠামো ধ্বংসের মতো কৌশলগত প্রশিক্ষণ।
২০২৪ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৩তম সংস্করণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৭৬ জন সদস্য, প্রধানত লাদাখ স্কাউটস এবং অন্যান্য শাখার সৈন্যদের নিয়ে গঠিত একটি দল অংশ নিয়েছিল। একইভাবে, রয়্যাল থাই আর্মির ৭৬ জন সদস্য, যাদের বেশিরভাগই ১ম ব্যাটালিয়ন, ১৪তম ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ৪র্থ ডিভিশনের সৈন্য, এই মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। এই মহড়া দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে।
এই মহড়া ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতীক। ‘মৈত্রী’ নামটি, যার অর্থ হিন্দিতে ‘বন্ধুত্ব’, এই দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া এই মহড়া প্রাথমিকভাবে থাই-ইন্ডিয়ান কো-অপারেশন ফিল্ড এক্সারসাইজ (টিআইসিএএফই) নামে পরিচিত ছিল, যা ২০১৩ সালে ‘মৈত্রী’ নামে পরিবর্তিত হয়।
মেঘালয়ের উমরোইয়ে অনুষ্ঠিত এই মহড়া কেবল সামরিক কৌশল উন্নত করার জন্যই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করবে, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধরনের যৌথ মহড়া উভয় দেশের সেনাবাহিনীকে একে অপরের কৌশল, প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং অপারেশনাল দক্ষতা সম্পর্কে গভীর ধারণা লাভ করতে সাহায্য করে, যা ভবিষ্যতে যৌথ মিশন পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী হবে।
এই মহড়া শুধুমাত্র সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতেও সহায়তা করে। এই ধরনের উদ্যোগ ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তি আরও মজবুত করবে।
বিধবা মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ, কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা
এই মহড়ার মাধ্যমে ভারত ও থাইল্যান্ড তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও গভীর করার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে। উমরোইয়ে আসন্ন এই মহড়া দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়, দক্ষতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।