ভারত ও আফগান তালিবান (India-Taliban Relation) সরকারের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ভারতীয় বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি আফগান তালিবানের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে দুবাইতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এই বৈঠকটি কাবুল এবং নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে এবং এতে উভয় দেশই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার লক্ষ্যে ইতিবাচক আলোচনা করেছে। এই বৈঠকে ভারতকে ‘পার্টনার’ দাবি করে তালিবান।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে, ভারত তালিবান সরকারের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি। তবে, সেই সময় থেকে ভারতীয় যুগ্ম সচিবরা সীমিত যোগাযোগের মাধ্যমে কাবুলের শাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। কিন্তু, এই প্রথমবারের মতো সচিব পর্যায়ের কোনও আধিকারিক তালিবান সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করলেন। এই বৈঠকটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, কারণ এটি ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের একটি বড় পদক্ষেপ এবং তালিবান সরকারের প্রতি ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে তুলে ধরছে।
এই বৈঠকটি পাকিস্তানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তান, যা দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে, ভারত ও তালিবানের এই মিত্রতার প্রসারকে একেবারেই ভালো চোখে দেখছে না। বিশেষত, পাকিস্তান মনে করছে, ভারত ও তালিবান সরকারের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি তাদের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক আগ্রাসনকে চ্যালেঞ্জ করে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নীতির সঙ্গে তালিবান সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েনও পাকিস্তানের উদ্বেগের কারণ।
ভারতের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা “কাঁটা দিয়ে কাঁটা ওপড়ানো” নীতি হিসেবে চিহ্নিত করছেন, যা ভারতের কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে নিন্দিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। ভারতের পক্ষ থেকে যে এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে, তা পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।
এছাড়া, ভারতের এ পদক্ষেপে আফগানিস্তান ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে পুনঃনির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। ভারত ও আফগানিস্তান যদি তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে সক্ষম হয়, তবে এটি তাদের বৃহত্তর অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
তবে, আফগান তালিবান সরকারের প্রতি ভারতের সঠিক কূটনৈতিক কৌশল কতটা সফল হবে, তা আগামী দিনগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্কার হবে। তবে, এই বৈঠকটি তাতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পাকিস্তানের জন্য এক নতুন চাপ সৃষ্টি করবে, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক দৃশ্যপটের এক নতুন চিত্র তুলে ধরবে।