ধর্মান্তকরণ ইস্যুতে শীর্ষ আদালতে বড় ধাক্কা যোগী সরকারের

/india/supreme-court-up-anti-conversion-law-right-to-privacy

নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রণীত বিতর্কিত অ্যান্টি-কনভার্শন আইন নিয়ে বড় মন্তব্য করল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও বিচারপতি দিপাঞ্জন দত্তের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, “ধর্মান্তর করার আগে বা পরে বাধ্যতামূলক ঘোষণা ও প্রশাসনিক যাচাইয়ের নিয়ম নাগরিকের বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে লঙ্ঘন করছে।”

Advertisements

বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, “বিশ্বাস, ধর্ম বা বিবাহের মতো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত নজরদারি গণতান্ত্রিক কাঠামোর সঙ্গে অসঙ্গত।” আদালত বলেন, যদি কেউ নিজের ইচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করেন, তবে তার জন্য প্রশাসনিক অনুমতি বা যাচাই চাওয়া সংবিধান-বিরুদ্ধ।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার তেলে, ভারতকে কি নেবে নয়া সিদ্ধান্ত?

তবে এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন “যদি কেউ জোর, প্রতারণা বা প্রলোভন দিয়ে ধর্মান্তর করায়, তাহলে তার তদন্ত কি অসাংবিধানিক?” অনেকে বলছেন, দেশে যেখানে কিছু অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সংগঠিত ধর্মান্তর ঘটে চলেছে, সেখানে সরকার যদি যাচাই করে, তা কি সংবিধানবিরোধী বলা যায়?

বিচারকদের মতে, আইন প্রয়োগের যুক্তি থাকলেও তার প্রক্রিয়া যেন নাগরিকের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে। তারা মন্তব্য করেন, “রাষ্ট্রের ভূমিকা রক্ষাকারীর, নিয়ন্ত্রকের নয়।” এই প্রসঙ্গে বেঞ্চ আরও উল্লেখ করেছে, নাগরিকের বিশ্বাসের অধিকার ঠিক ততটাই মৌলিক যতটা তার বাকস্বাধীনতা বা ধর্মাচরণের অধিকার। তাই ‘ঘোষণা ও যাচাই বাধ্যতামূলক’ এই নিয়মটি ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যকে খর্ব করে।

Advertisements

এদিকে, যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকার বলেছে, এই আইন তৈরি হয়েছে জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তর রোধের জন্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে এ আইন অনুযায়ী ৪০০-এরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে বহু অভিযোগ উঠেছেলাভ জিহাদের মতো সংগঠিত ধর্মান্তর চক্রের বিরুদ্ধে।

সরকারি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি ধর্মান্তর যদি স্বেচ্ছায় হয়, তাহলে যাচাই প্রক্রিয়ার কোনও ক্ষতি নেই; বরং তা জোর জবরদস্তি রোধের একমাত্র উপায়। কিন্তু আদালতের মতে, প্রশাসনিক তদন্তের আগে নাগরিককে “লিখিতভাবে জানাতে হবে যে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করছেন”এই ধারা আসলে নাগরিকের সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রের নজরদারিতে পরিণত করে।

এই পর্যবেক্ষণের পর আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতার সংজ্ঞা-নির্ধারণে এক নতুন অধ্যায় খুলে দেবে। কারণ, এটি একদিকে ধর্মান্তরবিরোধী আইনগুলিকে পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে গণতান্ত্রিক অধিকারের কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনছে।

তবে জনমতের বড় অংশ আদালতের এই অবস্থানের সঙ্গে একমত নন। অনেকেই বলছেন, “দেশে যখন মিশনারি অর্থায়নে ব্যাপক ধর্মান্তর ঘটে চলেছে, তখন সরকার যাচাই করবে না কেন?” তারা মনে করেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত “সেক্যুলার পক্ষপাতের” উদাহরণ, যেখানে সংগঠিত ধর্মান্তর বা জোরপূর্বক কনভার্শনের প্রশ্নে নীরব থাকা হয়, কিন্তু সরকারের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ‘অসংবিধানিক’ বলা হয়। এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে একথা স্পষ্ট আদালতের পর্যবেক্ষণ ভারতের ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ বনাম ‘রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ’-এর সীমারেখা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে।