ভারত শনিবার একটি দীর্ঘপাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র (Hypersonic Missile) সফলভাবে পরীক্ষা করেছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই ক্ষেপণাস্ত্র (Hypersonic Missile) পরীক্ষা ওডিশার উপকূলবর্তী ড. এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে সম্পন্ন হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এ বিষয়ে বলেন, “এই সাফল্যের মাধ্যমে ভারত তার সামরিক প্রযুক্তির উন্নতিতে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা সেই নির্বাচিত দেশগুলির কাতারে পৌঁছে গেছি, যারা এমন জটিল এবং উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করার সক্ষমতা রাখে।”
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র (Hypersonic Missile) হল এমন এক ধরনের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র যা শব্দের গতির পাঁচগুণেরও বেশি গতিতে চলতে সক্ষম। এটি অত্যন্ত উচ্চগতির পাশাপাশি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই প্রযুক্তি শুধু সামরিক ক্ষেত্রে নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, এবং চীনের মতো উন্নত দেশগুলিই মূলত এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র (Hypersonic Missile) প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী।
শনিবারের এই সফল পরীক্ষা ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ড. এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ, যা আগে হুইলার দ্বীপ নামে পরিচিত ছিল, থেকে পরীক্ষা চালানো হয়। এই দ্বীপ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং এর থেকেই আগেও অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।
এই ঐতিহাসিক ঘটনার বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সামাজিক মাধ্যম ‘X’ (পূর্বের টুইটার) এ লেখেন, “ভারত আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক (Hypersonic Missile) অর্জন করেছে। ড. এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে দীর্ঘপাল্লার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের (Hypersonic Missile) সফল পরীক্ষা দেশের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সাফল্য শুধুমাত্র দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করবে না, বরং এটি আমাদের বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
ভারতের এই সাফল্য একাধিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি: হাইপারসনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: এই সাফল্যের মাধ্যমে ভারত সেই কয়েকটি দেশগুলোর তালিকায় যোগ দিল, যারা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষা করতে সক্ষম।
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে শত্রু পক্ষের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে বোকা বানানো সম্ভব, যা কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এই প্রকল্পের মূল কারিগর। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রযুক্তি উন্নয়নের উপর কাজ করছে। DRDO এর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের কর্মক্ষমতা, গতি, এবং নির্ভুলতা যাচাই করা হয়েছে এবং সমস্ত ধাপে এটি সফল হয়েছে।
ভারত এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও, এটি শুধুমাত্র শুরু। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আরও উন্নত করা হবে। এর মাধ্যমে ভারতের সামরিক সক্ষমতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলিও ভারতের এই সাফল্যের দিকে নজর রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, এবং চীন ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। ভারতের এই সাফল্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।