নয়াদিল্লি/ওয়াশিংটন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভারত রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধ করবে। এই বক্তব্য তুলে ধরেছেন ভারতের প্রাক্তন আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মীরা শঙ্কর, যিনি সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে ভারত আর রাশিয়ান তেল কিনবে না।
এটি একটি বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে সাহায্য করবে।” এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে, কারণ ভারত রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতাদের একটি। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত রাশিয়া থেকে দৈনিক ১.৬২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যা দেশের তেল আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই আশ্বাসের ফলে মার্কিন নীতি নির্ধারকরা খুশি হলেও, ভারতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সতর্কতামূলক বক্তব্য এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভারত-ভুটান রেলপথে বিশেষ ট্রেন চালু, দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর
সম্প্রতি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প নিজেই এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমি খুশি ছিলাম না যে ভারত রাশিয়ান তেল কিনছে, কিন্তু মোদী আজ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা আর কিনবে না। এটি একটি বড় ধাপ।” ট্রাম্প আরও বলেন, “মোদী একজন মহান ব্যক্তি, তিনি ট্রাম্পকে ভালোবাসেন।
এই প্রক্রিয়া কিছুটা সময় নেবে, কিন্তু শীঘ্রই শেষ হবে।” এই বক্তব্য ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এসেছে, যেখানে আমেরিকা রাশিয়ার শক্তি রাজস্ব কমাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে চাপ দিচ্ছে। ট্রাম্প এখন চীনকেও একই আশ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন, যিনি ভারতের পর রাশিয়ান তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মীরা শঙ্কর, যিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ভারতের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন, এই আশ্বাসকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “এটি ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ। মোদী সরকার ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকলেও, মার্কিন চাপের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি বড় পরিবর্তন।” ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিদ্ধান্তের পেছনে অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে। ২০২২ সালের ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়া ভারতকে ছাড়া মূল্যে তেল বিক্রি করে, যা ভারতের তেল আমদানি খরচ ২০-৩০ শতাংশ কমিয়েছে।
এর ফলে ভারতের বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু মার্কিন সরকার ভারতের এই আমদানিকে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নের অংশ বলে মনে করে এবং ২০২৫ সালের আগস্টে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছে। এই ট্যারিফ ভারতের রফতানি খাতকে আঘাত করেছে, বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং আইটি সেক্টরে।
মোদীর এই আশ্বাস ট্যারিফ হ্রাসের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সাম্প্রতিককালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদপ্রাপ্ত সার্জিও গর মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকের পর ট্রাম্পের ঘোষণা এসেছে, যা ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে নতুন গতি দিতে পারে।