দিল্লি: সাধারণ মানুষের জন্য বড় সুখবর দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভোক্তাদের সুবিধার্থে এবং দেশের অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব ফেরাতে জিএসটি কাউন্সিলের বড় সিদ্ধান্ত, শতাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও গাড়ির উপর জিএসটি (GST) কমানো হল। বুধবার রাতে এক সাংবাদিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, এতদিনের জটিল কর কাঠামোকে সরল করার জন্য জিএসটির চারটি স্তরের বদলে নতুন দুটি হারে কর ধার্য করা হবে। বর্তমানে ৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮% এই চার স্তরের পরিবর্তে নতুন হার হবে ৫% এবং ১৮%।
অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘দেশে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে এবং বাজারে চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।’’ তিনি জানান, ২২ সেপ্টেম্বর, নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই এই নতুন হার কার্যকর হবে।
নতুন কাঠামো অনুসারে, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, সাবান সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোক্তা পণ্যে করের হার ১৮% থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে ৫%-এ। ছোট গাড়ি, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন প্রভৃতি জিনিসে করের হার ২৮% থেকে কমে হবে ১৮%। এছাড়াও জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা পলিসিতে সম্পূর্ণ করমুক্তির ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে বিলাসবহুল ও ক্ষতিকারক পণ্যের ক্ষেত্রে করের হার বাড়ানো হয়েছে। সিগারেট, কার্বনেটেড পানীয় এবং ১৫০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির উপর করের হার বাড়িয়ে ৪০% করা হয়েছে। সরকারের মতে, সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তি দিলেও বিলাসী ও ক্ষতিকারক পণ্যে কর বাড়ানোই সঠিক পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এই কর সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বুধবার সিদ্ধান্তের পর প্রধানমন্ত্রী এক টুইটে জানান, ‘‘বিস্তৃত জিএসটি সংস্কার সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে এবং ছোট ব্যবসায়ী থেকে বড় উদ্যোক্তা, সবার জন্য ব্যবসা করার পরিবেশকে আরও সহজ করবে।’’
এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র সরকার দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হিসেবে দেখছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধ এবং আমেরিকার বাড়তি শুল্কনীতির কারণে দেশীয় বাজারে চাহিদা কিছুটা নিম্নগামী। ফলে এই নতুন কর কাঠামো অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে শুধু সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ই বাড়বে না, বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থেকে যাবে, যা বিনিয়োগ ও চাহিদা বৃদ্ধি করবে। তাছাড়া বিমার ক্ষেত্রে করমুক্তি স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সুরক্ষা বাড়াতেও সহায়ক হবে।
জিএসটি প্রথম চালু হয় ২০১৭ সালে। প্রাথমিক পর্যায়ে এর জটিল কর কাঠামো নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। চার স্তরের কর ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়ীরা প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন। এবার সরকার কর কাঠামো সরলীকরণ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও সহজতা আনার বার্তা দিল।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর নতুন হারকে কেন্দ্র করে দেশের বাজারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।