নতুন করোনা ভ্যারিয়েন্ট চিন্তা বাড়ালেও আক্রান্তদের উপসর্গ হালকা

ভারতে কোভিড-১৯ কেস (Covid-19) আবারও বাড়ছে, যা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে স্বাস্থ্য বিভাগকে সতর্ক করেছে। এই সংক্রমণের বৃদ্ধি মূলত ওমিক্রনের উপ-ভ্যারিয়েন্ট NB.1.8.1 এবং LF.7 এর কারণে…

India Sees Mild Surge in Covid-19 Cases: New Variants Tracked

ভারতে কোভিড-১৯ কেস (Covid-19) আবারও বাড়ছে, যা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে স্বাস্থ্য বিভাগকে সতর্ক করেছে। এই সংক্রমণের বৃদ্ধি মূলত ওমিক্রনের উপ-ভ্যারিয়েন্ট NB.1.8.1 এবং LF.7 এর কারণে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই দুটি ভ্যারিয়েন্টকে ‘Variants Under Monitoring (VUMs)’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, তবে এগুলোকে এখনও ‘Variants of Concern (VOCs)’ বা ‘Variants of Interest (VOIs)’ বলে বিবেচনা করা হয়নি। তবে, এই ভ্যারিয়েন্টগুলো চীন এবং এশিয়ার অন্যান্য অংশে কেস বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে জানা গেছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং রাজ্য সরকারগুলো হাসপাতালের শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে। বেশিরভাগ কেস হালকা হলেও, সরকার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জনগণকে সতর্ক থাকার এবং কোভিড-উপযোগী আচরণ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব সম্প্রতি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন এবং জানিয়েছেন যে বেশিরভাগ কোভিড কেস হালকা প্রকৃতির এবং আক্রান্তরা বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চলছে। ভারতীয় SARS-CoV-2 জিনোম সিকোয়েন্সিং কনসোর্টিয়াম (INSACOG) এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে একটি NB.1.8.1 এবং চারটি LF.7 ভ্যারিয়েন্টের কেস শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে NB.1.8.1 তামিলনাড়ুতে এপ্রিল মাসে এবং LF.7 গুজরাটে মে মাসে শনাক্ত হয়েছে। যদিও WHO এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিকে নিম্ন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে, তবে এদের স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন (যেমন A435S, V445H, এবং T478I) বেশি সংক্রামকতা এবং ইমিউন এভেশন ক্ষমতা নির্দেশ করে।

   

রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতি

কর্ণাটক
কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও জানিয়েছেন, এই বছর রাজ্যে মোট ৩৫টি কেস রিপোর্ট হয়েছে, যার মধ্যে সাম্প্রতিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বেঙ্গালুরুতে ৮৪ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি, যিনি একাধিক রোগে ভুগছিলেন, কোভিডের কারণে মারা গেছেন। এছাড়া, একটি নয় মাসের শিশু কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে এবং বর্তমানে ভানি বিলাস হাসপাতালে স্থিতিশীল অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, তবে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার উপর জোর দিয়েছে।

দিল্লি
জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে তিন বছর পর প্রথমবারের মতো শুক্রবার ২৩টি নতুন কেস রিপোর্ট হয়েছে। দিল্লি সরকার হাসপাতালগুলোকে শয্যা, অক্সিজেন এবং ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পঙ্কজ সিং জানিয়েছেন, সব আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা স্থিতিশীল। সমস্ত পজিটিভ নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য লোক নায়ক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে এবং প্রতিদিনের রিপোর্ট দিল্লি স্বাস্থ্য পোর্টালে আপলোড করা হচ্ছে।

হরিয়ানা
হরিয়ানায় চারটি সক্রিয় কেস রিপোর্ট হয়েছে, যার মধ্যে দুটি গুরুগ্রামে এবং দুটি ফরিদাবাদে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরতি সিং রাও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আক্রান্তদের কারও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ইতিহাস নেই। রাজ্য সরকার জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় একজন ৫৫ বছর বয়সী মহিলা কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন এবং তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। এছাড়া, গাজিয়াবাদে চারটি নতুন কেস রিপোর্ট হয়েছে, যার মধ্যে তিনজন আইসোলেশনে রয়েছেন এবং একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কোভিড প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন এবং জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, তবে সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

মহারাষ্ট্র
মহারাষ্ট্রের থানেতে আটটি নতুন কেস এবং একটি মৃত্যু রিপোর্ট হয়েছে। মোট ১৮টি সক্রিয় কেসের মধ্যে মাত্র একজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মুম্বাই এই বছর ১২৬টি কেস রিপোর্ট করেছে, যার মধ্যে পুনে এবং কোলহাপুর থেকেও কেস এসেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ইনফ্লুয়েঞ্জা-সদৃশ রোগ (ILI) এবং গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (SARI) রোগীদের পরীক্ষা বাড়িয়েছে।

Advertisements

উত্তরাখণ্ড
ঋষিকেশের এইমস-এ তিনটি কেস রিপোর্ট হয়েছে, যার মধ্যে একজন বদ্রিনাথ যাত্রী এবং একজন রেসিডেন্ট ডাক্তার রয়েছেন। এইমস-এর পরিচালক ডা. মীনু সিং জানিয়েছেন, একজন রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এই ভ্যারিয়েন্টটি খুব ক্ষতিকর নয়, তবে সহ-রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তেলেঙ্গানা
হায়দ্রাবাদে একটি কেস রিপোর্ট হয়েছে, যেখানে একজন পালমোনোলজিস্ট কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তিনি পাঁচ দিনের আইসোলেশন প্রোটোকল মেনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও ট্রেস করা হয়েছে।

অন্ধ্রপ্রদেশ
অন্ধ্রপ্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় চারটি নতুন কেস রিপোর্ট হয়েছে—তিনটি বিশাখাপত্তনমে এবং একটি রায়ালসীমা অঞ্চলে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন মেডিকেল ছাত্র এবং দুজন তার পরিবারের সদস্য। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্য কুমার যাদব জনগণকে ভিড় এড়াতে এবং বয়স্ক ও সহ-রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বর্তমান কেসগুলো বেশিরভাগই হালকা এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সুরঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেসগুলো স্পোরাডিক এবং বিরল।” তবে, ঝুঁকিপ্রবণ গোষ্ঠী, যেমন বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং সহ-রোগে আক্রান্তদের মাস্ক পরা এবং ভ্যাকসিনের ডোজ আপডেট রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

  • কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে
  • পরীক্ষা বৃদ্ধি: ILI এবং SARI রোগীদের কোভিড পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে।
  • জিনোম সিকোয়েন্সিং: নতুন ভ্যারিয়েন্ট ট্র্যাক করতে জিনোম সিকোয়েন্সিং জোরদার করা হয়েছে।
  • হাসপাতাল প্রস্তুতি: শয্যা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর এবং ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
  • জনসচেতনতা: মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়ানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

যদিও ভারতে কোভিড-১৯ কেস বাড়ছে, তবে বেশিরভাগ সংক্রমণ হালকা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। NB.1.8.1 এবং LF.7 ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি সতর্কতার কারণ হলেও, WHO এর মতে এগুলোর ঝুঁকি কম। জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং কোভিড-উপযোগী আচরণ মেনে চলতে হবে।