ভারত–রাশিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্কের অক্ষ আরও শক্তপোক্ত হল মস্কোয়। মঙ্গলবার রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষ স্টেট দুমা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিল Reciprocal Exchange of Logistic Support (RELOS) চুক্তিকে। আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নয়া দিল্লি সফরের ঠিক আগে এই অনুমোদন কূটনৈতিক পর্যায়ে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
চুক্তিটি প্রথম স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন এটিকে দুমায় পাঠান চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। মঙ্গলবারের ভোটাভুটির মাধ্যমে চুক্তি কার্যকর হওয়ার পথে অন্যতম বড় ধাপ পূর্ণ হল।
দলিল গৃহীত হওয়ার সময় দুমার স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভলোদিন পরিষ্কার ভাষায় জানান, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কৌশলগত, দীর্ঘমেয়াদি এবং বহুস্তরীয়। আজকের অনুমোদন সেই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার নিশ্চিত পদক্ষেপ।”
RELOS: সামরিক সহযোগিতায় কাঠামোবদ্ধ যুগের সূচনা
এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত ও রাশিয়া প্রথমবারের মতো একটি একীভূত, সুসংহত লজিস্টিক কাঠামো পাচ্ছে। এখন থেকে দুই দেশই একে অপরের ভূখণ্ড, বন্দর, এয়ারফোর্স স্টেশন ও সামরিক পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে পূর্বনির্ধারিত নীতিমালার আওতায়।
এর ফলে—
- যুদ্ধজাহাজ, সেনা ও সামরিক বিমান চলাচলে লজিস্টিক সহায়তা অনেক দ্রুত ও স্বচ্ছ হবে,
- জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, খাদ্য ও স্টোরেজ সহ অপারেশনাল সাপোর্ট পাওয়া যাবে সহজেই,
- সামরিক অভিযানের সময় বহুবিধ ট্রানজিট ও অ্যাক্সেস বাধা দূর হবে,
- দুই দেশের যুদ্ধজাহাজের পারস্পরিক পোর্ট কল ও এয়ারস্পেস ব্যবহারের পথ আরও সুগম হবে।
এই সহযোগিতা এতদিন ছিল পরিস্থিতিনির্ভর। RELOS সেই ব্যবস্থাকেই বদলে দিচ্ছে একটি স্থায়ী, পূর্বনির্ধারিত সামরিক সমন্বয় কাঠামোয়।
কোথায় কোথায় কার্যকর হবে RELOS? India–Russia RELOS Defence Pact
দুমায় প্রকাশিত সরকারি নথি জানাচ্ছে, চুক্তিটি কার্যকর হতে পারে—
দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সেনা-মহড়া,
প্রশিক্ষণ ও অপারেশনাল অনুশীলন,
মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম,
প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা,
এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্মতিতে আরও বিশেষ সামরিক পরিস্থিতিতে।
রুশ মন্ত্রিসভা স্পষ্ট করেছে, RELOS চুক্তি কার্যকর হলে দুই পক্ষই বহুদিনের লজিস্টিক জটিলতা ও অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে—বিশেষ করে ট্রানজিট, অ্যাক্সেস ও রুটনির্ধারণ সংক্রান্ত দীর্ঘসূত্রিতা থেকে।
ভারত–রাশিয়া প্রতিরক্ষা কূটনীতিতে নতুন অধ্যায়
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত–রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক কোন পথে এগোচ্ছে—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আগ্রহ তুঙ্গে। ঠিক এই সময় দুমায় RELOS-এর অনুমোদন বিশেষজ্ঞদের মতে একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত—দুই দেশই সামরিক সহযোগিতার নতুন স্তরে প্রবেশ করতে চলেছে।
রুশ সরকারের নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই চুক্তি দুই দেশের সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সামঞ্জস্য, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং পারস্পরিক সমর্থনের কাঠামোকে আরও মজবুত করবে।
পুতিনের দিল্লি সফরের আগে মস্কোর এই সিদ্ধান্ত ভারত–রাশিয়া কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা অক্ষকে যে নতুন গতি দিল, তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনের সামরিক সহযোগিতা-চিত্রকে প্রভাবিত করবে।
