টানা দুই মাসের স্থবিরতার পর জুলাই মাসে ভারতের পণ্য রফতানি পুনরায় গতি পেয়েছে, (Export Growth)যা আগের বছরের তুলনায় ৭.২৯% বৃদ্ধি পেয়ে $৩৭.২৪ বিলিয়নে পৌঁছেছে। তবে, আমদানিও ৮.৬% বেড়ে $৬৪.৫৯ বিলিয়ন হয়েছে, ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে $২৭.৩৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা গত আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই ঘাটতি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যখন এটি ছিল প্রায় $১৯ বিলিয়ন। এই পরিসংখ্যান ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও, রফতানির প্রবৃদ্ধি দেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে পণ্য রফতানি গত বছরের তুলনায় ১.৪% কমে $৩৩.৯৮ বিলিয়ন হয়েছিল। তবে, পরিষেবা রফতানি ৮.৪৩% বৃদ্ধি পেয়ে $২৮.৪৩ বিলিয়ন হয়েছে, যা মোট রফতানিকে $৬২.৪১ বিলিয়নে নিয়ে গেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য ($৯.০৪ বিলিয়ন, ৩.৭% বৃদ্ধি), ইলেকট্রনিক পণ্য ($২.৮১ বিলিয়ন, ৩৭.৩% বৃদ্ধি), এবং ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস ($২.৩১ বিলিয়ন, ৮.৪% বৃদ্ধি) এই বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
কৃষি পণ্য যেমন চাল, তুলা, মশলা, চা এবং তামাকের রফতানিও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেন, “ভারত আজ দুধ, ডাল এবং পাট উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম এবং মাছ, চাল, গম, ফল এবং সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। কৃষি পণ্যের রফতানি ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।”
জুলাই মাসে আমদানি ৭.৫% বৃদ্ধি পেয়ে $৫৭.৪৮ বিলিয়ন হয়েছে, যার মধ্যে অপরিশোধিত তেল ($১৩.৮৭ বিলিয়ন, ১৭.৪% বৃদ্ধি), ইলেকট্রনিক পণ্য ($৮.৬৬ বিলিয়ন, ১১.৫% বৃদ্ধি), এবং কয়লা ও কোক ($২.৮৫ বিলিয়ন, ১০.২% বৃদ্ধি) প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। তবে, সোনার আমদানি ১০.৭% কমে $৩.১৩ বিলিয়ন হয়েছে।
রেড সি সংকট এবং বৈশ্বিক তেলের দামের ওঠানামা আমদানি ব্যয় বাড়িয়েছে, যা বাণিজ্য ঘাটতির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। চীন ($১০.২৯ বিলিয়ন), রাশিয়া ($৫.৪২ বিলিয়ন), এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোট ঘাটতির প্রায় ৭৫%।অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটবাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং তেলের দামের ওঠানামা আমাদের বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলছে।
তবে, ইলেকট্রনিক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের রফতানি ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে।” তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরে মোট রফতানি $৮০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১০% শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে চাহিদা হ্রাস রফতানির উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
তবে, সরকার নতুন বাজারে প্রবেশ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পরিকল্পনা করছে।কৃষি রফতানির ভূমিকাকৃষি পণ্যের রফতানি ভারতের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “কৃষি রফতানি ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা আমাদের কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম এবং সরকারের কৃষি-বান্ধব নীতির ফল।”
চাল, মশলা, তুলা, এবং তামাকের মতো পণ্য বিশ্ব বাজারে ভারতের অবস্থান মজবুত করেছে। এই রফতানি গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাণিজ্য ঘাটতির এই বৃদ্ধি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রুপির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা রফতানির সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করছে। তবে, সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগ এবং রফতানি প্রচার মিশন নতুন বাজারে প্রবেশ এবং দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছে। বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়াল বলেন, “আমরা নতুন বাণিজ্য চুক্তি এবং রফতানি বৈচিত্র্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করব।”
রাজভবনের স্বাধীনতা দিবস চা চক্রে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
জুলাই মাসে রফতানির বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত হলেও, বাণিজ্য ঘাটতির বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ। কৃষি এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের রফতানির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেশের সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছে। তবে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।