মহারাষ্ট্রের রাজনীতির মহাভারতে সাসপেন্সের পাশা খেলা যেন তুঙ্গে উঠেছে (India Politics)। চলতি বছরে ২৬ শে নভেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে মহারাষ্ট্রের বর্তমান বিধানসভার (India Politics)। তার আগে এখন থেকেই নির্বাচনে জেতার ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছে বিভিন্ন পক্ষ (India Politics)। আর এরই মধ্যে মহারাষ্ট্র রাজনীতির নাটকীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে একটি বৈঠক (India Politics)।
বিশেষজ্ঞদের মতে শরদ পাওয়ার এবং মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডের এই বৈঠকে বিজেপি শিবিরে যেন কাপুনি লেগেছে। এমনিতেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতি গত কয়েক বছর ধরেই নাটকীয়তায় ভরা। ২০১৯ এ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ম্যাজিক ফিগার না থাকায় সরকার গড়তে পারেনি বিজেপি। শিবসেনার উদ্ভব ঠাকরেকে সামনে রেখে সেবার সরকার গড়ে কংগ্রেস, এনসিপির মহাবিকাশ আগারী জোট। কিন্তু বছর কয়েক পরেই, শিবসেনাকে ভেঙে একনাথ শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রীত্ব দিয়ে চলতি সরকার ভাঙে বিজেপি। নতুন সরকার গঠন করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতির অন্যতম স্থপতি শরদ পাওয়ারের দলও ভেঙে যায়। উদ্ভব এবং শরদ দুই নেতাই তাদের নির্বাচনী প্রতীকও হারান। কিন্তু তারপরেও তাঁদের লোকসভাতে ব্যাপক সাফল্য রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটেছে কংগ্রেসও। ৪৯ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র লোকসভা তে ২৫ টি ছিল কংগ্রেস-উদ্ভব-শরদের ইন্ডিয়া জোটের দখলে। আর এবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেই শরদ পাওয়ারের বৈঠকে ঘটনার ঘনঘটা মহারাষ্ট্র জুড়ে।
TMC Panihati: তৃণমূলের মারমুখী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে যেন মমতা-অভিষেককেই অমান্যের ঔদ্ধত্য পানিহাটিতে!
যদিও শরদ পাওয়ারের মুখপাত্র সূত্রে জানা যাচ্ছে বৈঠকের কারণ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। মহারাষ্ট্রে কৃষিপণ্য এবং দুধের ক্রমবর্ধমান দাম নিয়েই আলোচনা করতে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই নেতা। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে না বিজেপি। এরই মধ্যে মহারাষ্ট্রের একটি সভাতে শারদ পাওয়ার এবং উদ্ভব ঠাকরেকে তীব্র আক্রমণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা নিয়ে রীতিমতন মানহানির অভিযোগ এনেছে দুই নেতার দলই।
তার পরপরই এই বৈঠকে জল্পনার পারদ তুঙ্গে। লোকসভা ভোটের ফলাফল বের হওয়ার পরই কাকা শরদের প্রশংসা করেছিলেন ভাইপো অজিত। আপাতত এনসিপির প্রতীক অজিতেরই অধিকারে রয়েছে। কিন্ত কাকা-ভাইপোর দূরত্ব কী কমছে? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ভোট শতাংশেও এনডিএকে টেক্কা দিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। তবে বিধানসভার হিসেবে দেখলে, এনডিএরই আধিপত্য রয়েছে। ২০৩ আসনে আপাতত এগিয়ে রয়েছে এনডিএ জোট। এখানে ইন্ডিয়া এগিয়ে ৬৯ টি আসনে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে না বিজেপি। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে এর আগেও বহুবার অঘটন ঘটিয়েছেন শরদ। এমনকী গতবার বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও প্রথম দফায় সরকার গড়তে না পারার মূল কারণই ছিল এই শরদ পাওয়ারের পলিটিক্যাল ম্যানেজমেন্ট। তাই এবার ভোটে বাদ্যিতে কাঠি পড়ার আগেই শরদের এই অ্যাকটিভ হয়ে ওঠাটা হালকা ভাবে নিতে চাইছে না তাঁরা।
যদি কোনও ভাবে একনাথ শিন্ডে এবং অজিত পাওয়ারকে ইন্ডিয়ামুখী করে তোলেন শরদ, তাহলে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপির বিপর্যয় অনিবার্য। হঠাৎ করে তাই শিন্ডে-শরদ বৈঠকে সন্দেহের বাতাবরণ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। ইতিমধ্যেই একাধিক জনমোহিনী প্রকল্পের ঘোষণা করে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের বর্তমান সরকার। সমস্ত প্রকল্পের বহর তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত।
মূল্যবৃদ্ধি মেনেও বাজেটের আগে আর্থিক সমীক্ষায় বড় দাবি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলার
কিন্তু তাতেও বিধানসভার কুর্সি নিজেদের দখলে রাখা নিয়ে চিন্তিত এনডিএ শিবির। বিজেপি এখন উদ্ভবের থেকেও হয়তো বেশি ভয় পাচ্ছে শরদকে এমনটাই মত অনেক বিশেষজ্ঞের। কারণ মহারাষ্ট্রের রাজনীতি শুধু নয়, ভারতীয় রাজনীতির মহাভারতে পিতামহ ভীষ্মের উপাধি প্রকারান্তরে একজনেরই দখলে। তিনি শরদচন্দ্র গোবিন্দরাও পাওয়ার। আর এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে শরদের এই পাওয়ার-প্লেকে তাই কোনওভাবেই হালকা করে দেখতে চাইছে না মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল।