আজ, ২৫ মার্চ, ২০২৫, মঙ্গলবার, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে শান্তিরক্ষা সংস্কার নিয়ে একটি বিতর্কের সময় পাকিস্তান পুনরায় জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) প্রসঙ্গ উত্থাপন করায় ভারত তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অ্যাম্বাসেডর পার্বতনেনি হরিশ এই মন্তব্যকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে জম্মু ও কাশ্মীরের যে অংশ তারা ‘অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে’ তা খালি করার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীর ছিল, আছে এবং সবসময় ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকবে।”
হরিশ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “ভারত লক্ষ্য করতে বাধ্য হয়েছে যে পাকিস্তানের প্রতিনিধি আবারও ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করেছেন। এই ধরনের বারবার উল্লেখ তাদের অবৈধ দাবিকে বৈধতা দেয় না বা তাদের রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষিত সীমান্ত-সন্ত্রাসবাদকে ন্যায্যতা দেয় না।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের একটি অংশ অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে এবং তাদের অবশ্যই সেই অঞ্চল খালি করতে হবে।
“পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে, যা তাদের খালি করতে হবে। আমরা পাকিস্তানকে পরামর্শ দেব যে তারা তাদের সংকীর্ণ ও বিভেদকারী এজেন্ডা চালানোর জন্য এই ফোরামের মনোযোগ বিচ্যুত করার চেষ্টা না করে। ভারত আরও বিস্তারিত জবাব দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকবে,” বলেন হরিশ।
এই ঘটনা জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা সংস্কার নিয়ে আলোচনার সময় ঘটেছে, যেখানে ভারত শান্তিরক্ষা মিশনকে আধুনিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপনকে ভারত ‘মিথ্যা দাবি’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ভারতীয় প্রতিনিধি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এই ধরনের মন্তব্য পাকিস্তানের ‘অবৈধ দখলদারি’ এবং ‘সীমান্ত-সন্ত্রাসবাদের’ নীতিকে সমর্থন করে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে গত বছর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নতুন সরকার নির্বাচন করেছে। এটি ভারতের দাবির শক্তি আরও জোরালো করে। ভারতের এই কড়া জবাব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রতিধ্বনি করে, যেখানে বলা হয় পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করতে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায়।
আরো দেখুন India Football Team: বাংলাদেশকে হারাতে কোন চাবিকাঠি খুঁজছে মার্কুয়েজের ভারত?
হরিশ পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, “এই ধরনের কৌশল জাতিসংঘের মতো মর্যাদাপূর্ণ ফোরামে গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি পাকিস্তানকে তার ‘বিভেদকারী এজেন্ডা’ থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন এবং শান্তিরক্ষা সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা সংস্কার নিয়ে এই বিতর্কের মূল উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান বিশ্বের জটিল পরিস্থিতি, যেমন সশস্ত্র গোষ্ঠী, অরাষ্ট্রীয় সংগঠন এবং আধুনিক অস্ত্রের হুমকির মোকাবিলায় শান্তিরক্ষা মিশনকে আরও কার্যকর করা। ভারত এই আলোচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে বলেছে যে, শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য ও পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ভারত শান্তিরক্ষায় নারীদের ভূমিকার ওপরও জোর দিয়েছে। হরিশ উল্লেখ করেন, ভারত সম্প্রতি গ্লোবাল সাউথের নারী শান্তিরক্ষীদের জন্য প্রথম সম্মেলন আয়োজন করেছে এবং বলেছেন, “এখন আর প্রশ্ন নেই যে নারীরা শান্তিরক্ষায় কাজ করতে পারে কিনা, বরং প্রশ্ন হল শান্তিরক্ষা কি নারীদের ছাড়া চলতে পারে?”
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপনের চেষ্টা নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে তারা এই বিষয়টি তুলে ধরে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, যা ভারত বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। ১৯৪৭-৪৮ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ভারতের দাবি, মহারাজা হরি সিং-এর স্বাক্ষরিত যোগদানপত্রের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর আইনত ভারতের অংশ হয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করে যে এই অঞ্চলের মুসলিম-প্রধান জনসংখ্যার কারণে এটি তাদের হওয়া উচিত। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা বর্তমানে লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC) নামে পরিচিত।
ভারতের বর্তমান সরকার ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আর্টিকল ৩৭০ বিলোপ করে এবং এটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে—জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। এই পদক্ষেপের পর থেকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বিষয়টি বারবার উত্থাপন করে আসছে। তবে, ভারত প্রতিবারই এটিকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উল্লেখ করে পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই বিতর্কের মধ্যে ভারত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। হরিশ বলেন, “বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে নিরাপত্তা পরিষদকে আরও প্রতিনিধিত্বশীল করতে হবে।” ভারত বিশ্বের শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বাধিক সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এই ক্ষেত্রে তার অবদান অতুলনীয়।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের এই কড়া অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে ভারত তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস করবে না। জাতিসংঘে এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার আরেকটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।