মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার ঘোষণা করেছেন যে ভারত ও পাকিস্তান (pakistan) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই ঘোষণা ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলতে থাকা সামরিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা এবং তার পরে ভারতের অপারেশন সিঁদুর কে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সামরিক অভ্যুত্থান চরমে পৌঁছেছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধ বিরতিতে রাজি। আজ দুপুর তিনটে নাগাদ পাকিস্তানের ডি জি এম ও ভারতের সেনা প্রধানকে যোগাযোগ করে যুদ্ধ বিরতির জন্য অনুরোধ করেন বলে জানা যাচ্ছে
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) May 10, 2025
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর, আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে ভারত এবং পাকিস্তান একটি পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরামে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশকে তাদের বিচক্ষণতা এবং মহান বুদ্ধিমত্তার জন্য অভিনন্দন। এই বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!”
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত (pakistan)
এই যুদ্ধবিরাম ভারত-পাকিস্তান (pakistan) সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করে এবং ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল আঘাত হানে।
এর জবাবে পাকিস্তান (pakistan) শনিবার ভোরে ভারতের ২৬টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যার মধ্যে উধমপুর, পাঠানকোট, আদমপুর, ভুজ এবং বাথিন্ডার বিমানঘাঁটিতে ক্ষতি হয়। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের রাফিকি, মুরিদ, চকলালা, রহিম ইয়ার খান, সুক্কুর এবং চুনিয়ানে সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং পাসরুর ও সিয়ালকোটের রাডার সাইটগুলিতে আঘাত হানে।
পাকিস্তান মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে দাবি করে
এই সংঘাতের মধ্যে পাকিস্তান (pakistan) মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে দাবি করে যে তারা ভারতের এস-৪০০ সিস্টেম, সুরাটগড় এবং সিরসার বিমানঘাঁটি এবং নাগরোটায় ব্রহ্মোস স্থান ধ্বংস করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এই দাবিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে সময়-চিহ্নিত ছবি প্রকাশ করেন, যা ভারতীয় বিমানঘাঁটির অক্ষত অবস্থা প্রমাণ করে। তিনি বলেন, “এই মিথ্যা বর্ণনাগুলি ভারতের সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করার এবং জনগণের মধ্যে ভয় ছড়ানোর একটি কৌশল।”
মার্কিন মধ্যস্থতার পেছনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে টেলিফোনিক আলোচনা করেন।
পাকিস্তান তাদের প্রাথমিক ঘোষণা প্রত্যাহার করে
এই আলোচনার পর পাকিস্তান তাদের প্রাথমিক ঘোষণা প্রত্যাহার করে, যেখানে তারা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ) বৈঠক ডাকার কথা বলেছিল। পাকিস্তানের (pakistan) প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানান, পারমাণবিক বিকল্প টেবিলে নেই, তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সংঘাত অঞ্চলের বাইরেও ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের (pakistan) মধ্যে উত্তেজনা “দুঃখজনক” এবং তিনি এই সংঘাত বন্ধ করতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ভারত তাঁর এই প্রস্তাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে, জানায় যে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার পরিবর্তে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে, শনিবারের যুদ্ধবিরাম ঘোষণা মার্কিন কূটনীতির একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই যুদ্ধবিরাম ঘোষণা ভারত ও পাকিস্তানের তরফে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পায়নি। পাকিস্তানের (pakistan) প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ শনিবার সকালে বলেছিলেন, তাঁর দেশ ভারতের হামলার “যোগ্য জবাব” দিয়েছে। তবে, মার্কিন মধ্যস্থতার ফলে উভয় দেশ শান্তির পথে এগিয়েছে।
ভারত তার কূটনৈতিক অবস্থান প্রদর্শন করেছে
এই সংঘাতে ভারত তার শক্তিশালী সামরিক এবং কূটনৈতিক অবস্থান প্রদর্শন করেছে। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, “পাকিস্তানের পদক্ষেপগুলি উসকানিমূলক ছিল, এবং ভারত দায়িত্বশীলভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।” ভারত ঘোষণা করেছে যে ভবিষ্যতে যেকোনো জঙ্গি হামলাকে যুদ্ধের কাজ হিসেবে গণ্য করা হবে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি কঠোর সতর্কবাণী।
যুদ্ধবিরাম ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে। সৌদি আরব এবং কাতারের মতো দেশও এই সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই ঐতিহাসিক চুক্তির পথ প্রশস্ত করে।
এই যুদ্ধবিরাম অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু, এখনও সমাধানের অপেক্ষায়। ভারতের অবস্থান স্পষ্ট যে ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি এবং ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণা অনুযায়ী এই সমস্যাগুলি দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করতে হবে।
এই ঘটনা ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ হলেও, বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য উভয় দেশের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্নির্মাণ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রকৃত পদক্ষেপ প্রয়োজন। আপাতত, এই যুদ্ধবিরাম উভয় দেশের জনগণের জন্য স্বস্তি এনেছে এবং অঞ্চলের উত্তেজনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।