সতর্ক ভারত! চিনের হাত ধরে ওড়িশা উপকূলের কাছে ২১ পাকিস্তানি

চিনের সঙ্গে যুক্ত একটি হংকং-ভিত্তিক শিপিং কোম্পানির তেলবাহী জাহাজ (China-Linked Ship) ভারতের ওড়িশা উপকূলের কাছে এসে পৌঁছতেই চাঞ্চল্য ছড়াল। ওই জাহাজে থাকা ২৫ জন ক্রু…

China-Linked Ship with 21 Pakistanis Near Odisha Coast

চিনের সঙ্গে যুক্ত একটি হংকং-ভিত্তিক শিপিং কোম্পানির তেলবাহী জাহাজ (China-Linked Ship) ভারতের ওড়িশা উপকূলের কাছে এসে পৌঁছতেই চাঞ্চল্য ছড়াল। ওই জাহাজে থাকা ২৫ জন ক্রু সদস্যের মধ্যে ২১ জন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন বলে খবর। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সতর্ক হয়ে উঠেছে। জাহাজটি বর্তমানে ওড়িশার পারাদ্বীপ বন্দরের উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে সমুদ্রে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

এই তেলবাহী জাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রওনা দিয়ে পারাদ্বীপ বন্দরে তেল খালাস করতে আসছিল। তবে, জাহাজটিতে এত সংখ্যক পাকিস্তানি নাগরিক থাকার খবর পাওয়ার পরেই ভারতের মেরিন পুলিশ, কোস্ট গার্ড এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে জাহাজটির উপর নজরদারি চালাচ্ছে।

   

সূত্রের খবর অনুযায়ী, পারাদ্বীপ বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তেল খালাসের অনুমতি দেয়নি। ফলে জাহাজটিকে সমুদ্রেই অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে জাহাজটি আগামীকালই ফিরে যাবে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার যে ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর অধীনে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেই নির্দেশই এখন কার্যকর হচ্ছে। সেই কারণে ওই ২১ জন পাকিস্তানি ক্রু সদস্য-সহ সকলকে জাহাজেই থাকতে বলা হয়েছে। কোনও রকমভাবে তাদের তীরে নামার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

জানা গিয়েছে, জাহাজটিতে থাকা ২৫ জন ক্রু সদস্যের মধ্যে ২১ জন পাকিস্তানি নাগরিক ছাড়াও রয়েছেন একজন থাই নাগরিক, একজন শ্রীলঙ্কান এবং দু’জন ভারতীয়। জাহাজটি হংকংয়ের একটি শিপিং সংস্থার অধীন, যা চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এমন একটি জাহাজের ভারতীয় বন্দরের এত কাছাকাছি চলে আসা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও রকম ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে চিন-পাকিস্তান যৌথ অংশীদারিত্বের বিভিন্ন নজির আগে থেকেই রয়েছে। তাই একটি চিনা সংস্থার জাহাজে এতজন পাকিস্তানি নাগরিকের উপস্থিতি সন্দেহজনক বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

ওড়িশা প্রশাসনের এক সিনিয়র আধিকারিক জানান, “আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এই মুহূর্তে কাউকে জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হবে না। সমস্ত নিয়ম মেনে তদন্ত চলবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার সহায়তা নেওয়া হবে।”

পারাদ্বীপ বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি, বন্দরের আশপাশের এলাকা ও সমুদ্র উপকূলে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে যৌথ সামুদ্রিক কার্যকলাপ নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভারতের জলসীমায় এমন তেলবাহী জাহাজ প্রবেশ এবং তার সঙ্গে যুক্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের উপস্থিতি এক উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। এটি নিছকই একটি বানিজ্যিক কার্যক্রম, নাকি এর আড়ালে কোনও গোয়েন্দা বা অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, জাহাজটি ওড়িশা উপকূলে থেমে থাকলেও, ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণ সতর্ক। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নীতির পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তানি নাগরিকদের কোনও ভাবেই দেশের মাটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না—এটাই সরকারের স্পষ্ট বার্তা।