NAM বৈঠকে কীর্তি বর্ধনের বক্তব্যে প্যালেস্টাইন ইস্যুতে আশার আলো

india-nam-palestine-kirti-vardhan-singh-peace-commitment

বিশ্বজুড়ে যখন প্যালেস্টাইন সংকট আবারও আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে, তখন ভারতের পক্ষ থেকে উঠে এল শান্তি ও স্থিতিশীলতার এক ইতিবাচক বার্তা। নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট (NAM)-এর প্যালেস্টাইন বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কির্তি বর্ধন সিংহ বলেন, “আমরা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছি, যখন আশার আলো আবারও জ্বলে উঠেছে।”

Advertisements

কালীপুজো ঘিরে শিয়ালদহে রেলের বিশেষ প্রস্তুতি, যাত্রী সুরক্ষায় কড়া নজরদারি

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ দূত হিসেবে তিনি সম্প্রতি মিশরের শার্ম এল শেখে শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন উদ্যোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। কির্তি বর্ধন সিংহ বলেন, “ভারত স্বাগত জানাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাতে চাই NAM-এর দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ মিশর ও কাতারকে, যারা এই চুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তাঁদের কূটনৈতিক নেতৃত্ব ও মধ্যস্থতা এই চুক্তিকে সম্ভব করেছে।”

এই বৈঠকে কির্তি বর্ধন সিংহ স্পষ্ট করে বলেন, ভারত সব সময়ই বিশ্বাস করে, শান্তি, আলোচনার পথ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা এই তিনটি মূল্যবোধই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, “এই প্রথম ধাপ ভবিষ্যতের একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা করবে, যেখানে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন উভয়েই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে এগিয়ে যেতে পারবে।”

ভারত বরাবরই NAM-এর একটি সক্রিয় ও দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। প্যালেস্টাইন ইস্যুতেও ভারতের অবস্থান সবসময়ই ছিল দুই-রাষ্ট্র সমাধান ও সংলাপভিত্তিক শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে। কির্তি বর্ধন সিংহ তাঁর বক্তব্যে সেই অবস্থানকেই আরও জোরদার করে বলেন, “ভারত মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার NAM অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

Advertisements

তিনি আরও যোগ করেন, “ভারত ভবিষ্যতেও এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। NAM-এ আমাদের ভূমিকা কেবল কূটনৈতিক সৌজন্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানবিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতিও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, NAM মঞ্চে ভারতের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির প্রতিফলন। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে, অন্যদিকে NAM-এর ঐক্য বজায় রেখে ভারত এক মধ্যপন্থী ও বাস্তববাদী কূটনীতির উদাহরণ তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, NAM এমন এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ যা শীতল যুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাসী দেশগুলিকে একত্রিত করেছিল। আজও এই সংগঠন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শান্তি, সহযোগিতা ও উন্নয়নের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কির্তি বর্ধন সিংহের বক্তব্যে তাই স্পষ্ট, ভারত শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, গোটা বিশ্বের শান্তির জন্যই তার ঐতিহ্যবাহী নিরপেক্ষ কূটনৈতিক দর্শনকে নতুন যুগে আরও শক্তিশালীভাবে প্রয়োগ করতে চায়। শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুই শান্তি আলোচনা নয় বরং এমন এক মধ্যপ্রাচ্য গঠন, যেখানে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও উন্নয়ন প্রতিটি মানুষের অধিকার হয়ে উঠবে।”