মোদী জমানায় ভারতে শিক্ষার হার জানলে অবাক হবেন

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় অবিশ্বাস্য উন্নতি ঘটেছে (India Literacy Rate) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গত এক দশক ধরে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সাক্ষরতা হার ২০১১ সালে…

India's literacy rate hits 80.9% in 2024 under Modi's leadership

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় অবিশ্বাস্য উন্নতি ঘটেছে (India Literacy Rate) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গত এক দশক ধরে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সাক্ষরতা হার ২০১১ সালে ৭৪ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৮০.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা একটি ঐতিহাসিক লাভ। এই অগ্রগতি সরকারের শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগের ফল, যেমন উল্লাস-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচি, যা গ্রামীণ এবং মহিলা সাক্ষরতাকে উন্নীত করতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এই সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সরকারি প্রতিবেদনে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, যা ভারতকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথকে নির্দেশ করছে।

শিক্ষার অগ্রগতির (India Literacy Rate) পেছনে সরকারের ভূমিকা

ভারত সরকারের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (NSO) ২০২৩-২০২৪ সালের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (PLFS) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শহরী এলাকায় সাক্ষরতা হার ৯০ শতাংশ, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় এটি ৭৭ শতাংশ। এই পার্থক্য নির্দেশ করে যে শহরগুলোতে শিক্ষা প্রসারের জন্য বিশেষ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যা উন্নত প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোর মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে শুরু করা দ্বারকা-নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক সাক্ষরতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এছাড়াও, পিএম ইভিডিয়া চ্যানেলের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় দূরবর্তী শিক্ষা সরবরাহ করা হয়েছে, যা শিক্ষার সুযোগ সমানভাবে বিতরণে সহায়ক হয়েছে।

   

Also Read | 

অঞ্চলভেদে শিক্ষার অগ্রগতি
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিমাচল প্রদেশে দেখা গেছে, যেখানে সাক্ষরতা হার ৯৯.৩ শতাংশে পৌঁছেছে, ফলে এটি দেশের পঞ্চম পুরোপুরি সাক্ষর রাজ্য হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, বিহার, আন্ধ্র প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে, যথাক্রমে ৭৪.৩ শতাংশ, ৭২.৬ শতাংশ এবং ৭৮.২ শতাংশ সাক্ষরতা হার রয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে শিক্ষা প্রসারের জন্য অবকাঠামোর অভাব এবং অর্থনৈতিক পিছিয়ে পড়া একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। তবে বিহারের সাক্ষরতা হার ২০১১ সালে ৬৩.৮২ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৭৪.৩ শতাংশে উন্নীত হওয়া একটি ইতিবাচক সংকেত, যা রাজ্য সরকারের শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের ফলাফল।

লিঙ্গভেদ ও শিক্ষার চ্যালেঞ্জ
এক্ষেত্রে লিঙ্গভেদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। NSO-এর ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের সাক্ষরতা হার ৮৪.৭ শতাংশ, যেখানে মহিলাদের হার ৭০.৩ শতাংশ। এই ভারসাম্যহীনতা গ্রামীণ এলাকায় আরও তীব্র, যেখানে সামাজিক প্রথা এবং অর্থনৈতিক চাপ মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে। তবে গবেষণা প্রমাণ করে যে মহিলা সাক্ষরতা বৃদ্ধি পারিবারিক পরিকল্পনায় ১৫ শতাংশ অবদান রাখে, যা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকার এই গ্যাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য মধ্যাহ্ন ভোজন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক এবং পোশাক সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যা মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করছে।

Advertisements

Also Read | 

ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনা
মোদী সরকারের নতুন শিক্ষা নীতি (NEP) ২০২০ শিক্ষার গুণগত উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ৫+৩+৩+৪ সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনকে সহজ করার লক্ষ্য রাখে। এছাড়াও, জাতীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশন (NDLM) প্রতিটি গৃহে কমপক্ষে একজন ডিজিটাল সাক্ষর ব্যক্তি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে, যা শিক্ষার আধুনিকীকরণে সহায়ক হবে। তবে সমালোচকরা মনে করেন, শিক্ষার গুণগত উন্নতির পাশাপাশি অঞ্চলভেদ ও লিঙ্গভেদ কাটানোর জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ ও নীতি প্রয়োজন।

মোদী জমানায় ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা যে অগ্রগতি করেছে তা অস্বীকারযোগ্য নয়। ৮০.৯ শতাংশ সাক্ষরতা হার ভারতকে বিশ্বের শীর্ষ শিক্ষিত দেশগুলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তবে এখনো পথ বাকি। হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যগুলো একটি আদর্শ হিসেবে কাজ করতে পারে, যেখানে সমাজ ও সরকারের সমন্বয়ে শিক্ষা প্রসার সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার গুণগত উন্নতি এবং সমানতার দিকে কাজ চালিয়ে গেলে ভারত একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করতে সক্ষম হবে।