ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সঙ্গে কাজাখস্তান (India-Kazakhstan) প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং চিফ অফ জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুলতান কামালেটদিনভ সোমবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন।
এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি, সামরিক-সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক শান্তির প্রতি পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি পিআই) তাদের অফিসিয়াল এক্স পোস্টে এই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত।
নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুলতান কামালেটদিনভ দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক জোরদার করার উপর জোর দিয়েছেন। আলোচনায় মূলত দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা, যৌথ সামরিক মহড়া, প্রযুক্তি বিনিময় এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়া, মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আফগানিস্তান সংকটের প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত ও কাজাখস্তান উভয়ই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক শান্তির জন্য তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এই বৈঠক ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারত ও কাজাখস্তান দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। দুই দেশের মধ্যে ‘কাজিন্দ’ নামে যৌথ সামরিক মহড়া নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাজাখস্তান শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সদস্য এবং ভারতের সঙ্গে এই প্ল্যাটফর্মে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।
এছাড়া, কাজাখস্তানের ইউরেনিয়াম রপ্তানি ভারতের পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত কাজাখস্তানের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। এই বৈঠক এই সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রচেষ্টার একটি অংশ।
মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত সংবেদনশীল। আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসা এবং এই অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারত ও কাজাখস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ভারত মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে এই অঞ্চলে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে।
কাজাখস্তানের সঙ্গে এই বৈঠক এই লক্ষ্যের একটি অংশ। জেনারেল দ্বিবেদী এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামালেটদিনভের আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, “আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক শান্তির প্রতি পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।”
এই বৈঠক ভারত-কাজাখস্তান সম্পর্কে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। দুই দেশের মধ্যে আরও যৌথ সামরিক মহড়া, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করা ভারতের কৌশলগত স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ এবং রাশিয়ার প্রভাবের প্রেক্ষাপটে। কাজাখস্তানের সঙ্গে এই সহযোগিতা ভারতের এসসিও কার্যক্রমে আরও গতি আনবে।
এই বৈঠকের খবর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক্স পোস্টে বৈঠকের ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যা দুই দেশের সামরিক নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক ভারতের কৌশলগত অবস্থানকে মধ্য এশিয়ায় আরও শক্তিশালী করবে। কাজাখস্তানের সঙ্গে এই সহযোগিতা ভারতের প্রতিরক্ষা কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বৈদ্যুতিন পণ্য রফতানিতে বড় সাফল্য! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আসছে ভারতে
জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুলতান কামালেটদিনভের এই বৈঠক ভারত-কাজাখস্তান প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ভারতের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই বৈঠক ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে আরও গভীর সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে।