ভারত সরকারের (India) একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (USA) রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, উত্তর কোরিয়ায় (North Korea) একটি নতুন দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে ভারত। গত তিন বছরে করোনা মহামারির কারণে বন্ধ থাকার পর, ভারত আবার পিয়ং ইয়ং-এ তার দূতাবাস চালু (Indian Embassey in North Korea) করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই উদ্যোগে একটি বিশেষ টেকনিক্যাল টিমও উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয়েছে, যার কাজ হবে দূতাবাসে কোনো ধরনের গোপন নজরদারি ডিভাইসের উপস্থিতি খুঁজে বের করা এবং তা সরিয়ে ফেলা।
‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’! কানাডার পর এবার খালিস্তান ইস্যুতে ভারতকে বিঁধল ব্রিটেন
ভারতের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভারত ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, বিশেষ করে ওই অঞ্চলে ভারতের কূটনৈতিক উপস্থিতি আরও শক্তিশালী হতে পারে। পাশাপাশি, ভারতের এই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে যাচ্ছে, কারণ আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কিংবা সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক দূতাবাস খোলার বিরোধী। তবে, ভারত স্বাধীনভাবে তার কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
রাম ভক্ত নিপুণ রায় জামাত ইসলামির ঘনিষ্ঠ, বাংলাদেশের ‘হার্টথ্রব’ নেত্রী সম্পর্কে জানুন
প্রধানত, ভারতের বিশেষ টেকনিক্যাল টিমের কাজ হবে দূতাবাসে এমন কোনো ধরনের ডিভাইস খুঁজে বের করা যা গোপনে নজরদারি চালাতে পারে। এই ধরনের নজরদারি ডিভাইসগুলো সাধারণত দূতাবাসের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে এবং আন্তর্জাতিক আইনও এর বিরুদ্ধে। টেকনিক্যাল টিমের সদস্যরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেমন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ও সেন্সর, দূতাবাসের সমস্ত স্থান পরিদর্শন করবেন এবং কোনো গোপন নজরদারি ডিভাইস থাকলে সেগুলি উদ্ধার করবেন।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক কূটনৈতিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ভারতের লক্ষ্য হল উত্তর কোরিয়া-ভিত্তিক কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রসার ঘটানো। যদিও উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে অবরুদ্ধ এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন অনেক দেশই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, ভারত দীর্ঘকাল ধরে বৈশ্বিক মঞ্চে স্বতন্ত্র নীতি অনুসরণ করে এসেছে। ভারত নিজের কূটনৈতিক সম্পর্কের বিস্তারের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ভারতের এই পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠাচ্ছে। ভারত দেশটির সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত। তবে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, কারণ আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা কিংবা তার সঙ্গে কোনো ধরণের কূটনৈতিক বিনিময়ে বিরোধী। কিন্তু ভারতের কূটনৈতিক মিশন হল বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করা, যা দেশের স্বার্থে উপকারী হতে পারে।
সংসদ-মারপিট মামলায় এবার রাহুলের বিরুদ্ধে সিবিআই, তুঙ্গে জল্পনা
২০২১ সালে করোনা মহামারির পর, ভারতীয় দূতাবাস পিয়ং ইয়ং এ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে, দীর্ঘ তিন বছর পর আবারও এই দূতাবাস চালু হওয়ার ফলে ভারত উত্তর কোরিয়ায় তার কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া, এটি ভারতের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যাতে তাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত-উত্তর কোরিয়া সম্পর্কের উন্নতি কেবল দক্ষিণ কোরিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বরং এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভারতকে শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।