আন্তর্জাতিক কূটনীতির অস্থির প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে ফের স্পষ্ট অবস্থান নিল নয়াদিল্লি। জাতীয় নিরাপত্তা ও পরমাণু নীতির প্রশ্নে ভারত কোনও বিদেশি শক্তির নির্দেশ বা চাপ মেনে চলবে না, প্রথম সারির এক সংবামাধ্যমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানালেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।
দেশের প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত
সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং বলেন, “ভারতের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ভারতের স্বার্থের ভিত্তিতেই নেওয়া হবে। আমেরিকা বা পাকিস্তান কী করছে, তা নয়াদিল্লির নীতিতে প্রভাব ফেলবে না। ওরা নিজেদের মতো চলুক, আমরা যা করব, তা করব সঠিক সময়ে, দেশের প্রয়োজন বুঝে।”
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও আমেরিকার পারমাণবিক নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যে নয়া আলোচনার জন্ম নিয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনাথ সিং স্পষ্ট করলেন— পরমাণু নীতিতে আত্মনির্ভরতা ও কৌশলগত স্বাধীনতাই ভারতের মূল দর্শন।
অপারেশন সিঁদুর: সাফল্যের পরেই থেমেছে অভিযান
অপারেশন ‘সিঁদুর’–এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজনাথ সিং জানান, অভিযানটি সম্পূর্ণ ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ীই শেষ হয়। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (DGMO)–এর কাছ থেকে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির অনুরোধ এসেছিল। আমরা লক্ষ্য পূর্ণ করার পরেই অভিযান শেষ করেছি। প্রয়োজনে আবারও করব।”
রাজনাথ জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় সেনা কেবল সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিকেই লক্ষ্যবস্তু করেছিল, কোনওভাবেই বেসামরিক এলাকা নয়। “আমরা সন্ত্রাসবাদীদের আঘাত করেছি, সাধারণ নাগরিকদের নয়,” তাঁর দৃঢ় মন্তব্য।
‘কোনও তৃতীয় পক্ষ নয়’ যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকায় সাফাই
সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার গুঞ্জনও স্পষ্টভাবে খারিজ করেন রাজনাথ সিংহ। তাঁর ভাষায়, “এই যুদ্ধবিরতি কেবল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হয়েছিল। কোনও তৃতীয় পক্ষ এতে যুক্ত ছিল না।”
পাকিস্তানকে কটাক্ষ: ‘নিজেই পদোন্নতি নিয়েছেন’
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ‘ফিল্ড মার্শাল’-এ উন্নীত করার ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ ছুড়েছেন রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, “উনি নিজেই নিজের পদোন্নতি ঘোষণা করেছেন। পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না।”
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনাথের এই মন্তব্য শুধু সীমান্ত নীতির নয়, ভারতের বৃহত্তর কৌশলগত অবস্থানেরও প্রতিফলন, যেখানে নয়াদিল্লি নিজের সামরিক, পারমাণবিক ও নিরাপত্তা সিদ্ধান্তে ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র’ হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরছে।


