এক ফোঁটা নয়! সিন্ধুর জল বন্ধ, পাকিস্তানের শিরদাঁড়ায় কাঁপুনি!

India halts Indus water treaty নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের উপরে হওয়া নারকীয় জঙ্গি হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরে নজিরবিহীন কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিল ভারত। ১৯৬০…

India halts Indus water treaty

India halts Indus water treaty

নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের উপরে হওয়া নারকীয় জঙ্গি হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরে নজিরবিহীন কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিল ভারত। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ‘সিন্ধু জলচুক্তি’ সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল কেন্দ্র। আর সেই সিদ্ধান্তকেই “জাতীয় স্বার্থে সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত” বলে ব্যাখ্যা করলেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাটিল। তাঁর সাফ কথা, “ভারত নিশ্চিত করবে, সিন্ধু নদী থেকে এক ফোঁটাও জল পাকিস্তানে না যায়।”

   

এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পাকিস্তান একে কার্যত ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলেই আখ্যা দিয়েছে।

 কী এই সিন্ধু জলচুক্তি?

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জলসম্পদ বণ্টন নিয়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকে। অবশেষে ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‘সিন্ধু জলচুক্তি’। এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদীব্যবস্থার মোট ৬টি নদীর মধ্যে— পূর্বের তিনটি নদী (রবি, বেয়াস, শতদ্রু) পুরোপুরি ভারতের অধিকারে যায় এবং পশ্চিমের তিনটি নদী (সিন্ধু, ঝিলম, চেনাব) থেকে পাকিস্তান জল পাওয়ার অধিকারী হয়। তবে এই নদীগুলির উৎস ভারতের মধ্যেই।

গত কয়েক দশকে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে এই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে বারবার, বিশেষত ভারতের কিশনগঙ্গা ও রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে। এবার, সেই সমস্ত আপত্তিকে উপেক্ষা করে, ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল।

 কেন স্থগিত করা হল চুক্তি? India halts Indus water treaty

বুধবার সরকারের পক্ষ থেকে সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা করা হয়। পরদিন পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ভারতের জলশক্তি মন্ত্রক স্পষ্ট জানায়, “সিন্ধু চুক্তি একমাত্র তখনই কার্যকর থাকবে, যখন দুই পক্ষ পারস্পরিক বিশ্বাস, সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলবে। কিন্তু সীমান্তের ওপার থেকে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান সেই বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে।”

সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাসভবনে হওয়া উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জলশক্তি, বিদেশ মন্ত্রক ও নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই স্থির হয়, চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী নয়, বাস্তবায়নের কাজও অবিলম্বে শুরু হবে।

কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?

জল ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি: ঝিলম, চেনাব এবং সিন্ধুর ধারে যে সমস্ত বাঁধ আছে, সেগুলি থেকে পলি সরিয়ে জলাধারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানে যাওয়া জলের পরিমাণ কমে যাবে।

বিদ্যুৎ প্রকল্পে গতি: কিশনগঙ্গা (ঝিলমের শাখা নদীতে) এবং রাটলে (চেনাবের উপর নির্মীয়মাণ) জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে পাকিস্তানের আপত্তি থাকলেও, এবার ভারত আর তা পাত্তা দেবে না। এই প্রকল্পগুলিকে দ্রুত শেষ করাই এখন লক্ষ্য।

নতুন পরিকাঠামো: দীর্ঘমেয়াদে ভারত নতুন জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ করে এই নদীগুলির জল আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে চায়, কৃষি, বিদ্যুৎ ও পানীয় জল সরবরাহে।

আন্তর্জাতিক স্তরে প্রস্তুতি

ভারতের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়া আসা অবশ্যম্ভাবী। বিশ্বব্যাংক কিংবা রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো সংগঠন থেকে চাপ আসতে পারে। তাই কেন্দ্র ইতিমধ্যেই একটি আইনি ও কূটনৈতিক কোর টিম গঠন করেছে, যারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

এই ঘোষণার পরই পাকিস্তান কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদ জানায়, “সিন্ধু চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানের প্রাপ্য জল রুখে দেওয়া হলে তাকে আমরা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করব এবং পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেব।”

দেশের মানুষের উপর প্রভাব?

সরকারি সূত্র বলছে, ভারতীয় নাগরিকদের জল সংক্রান্ত কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করাই প্রথম অগ্রাধিকার। জলের প্রাপ্যতা যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে, তার জন্যই কৌশলগতভাবে বাঁধ ও জলাধারের ব্যাবস্থাপনা বদলানো হবে।

সিন্ধু জলচুক্তি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি সফল জলবণ্টন চুক্তি বলে পরিচিত। একে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র জলবণ্টনের প্রশ্ন নয়, এটি একটি কৌশলগত বার্তা— যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, তার সঙ্গে বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনও চুক্তি চালিয়ে যাওয়া যায় না।

Bharat: India suspends Indus Waters Treaty after Pahalgam attack, calling it “just” in national interest. Pakistan reacts strongly, sees it as “declaration of war.” Details on treaty & implications.