আয়ুর্বেদ নিয়ে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার (Modi government)। আগামী থেকে প্রতি বছর ২৩ সেপ্টেম্বর দিনটি “আয়ুর্বেদ দিবস” হিসেবে (National Ayurveda Day) পালিত হবে—এই ঘোষণা সরকারিভাবে জারি করা হয়েছে ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ তারিখে একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। এতদিন আয়ুর্বেদ দিবস ধনতেরস উপলক্ষে পালিত হত, যা হিন্দু চন্দ্র ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পড়ে। তবে এবার থেকে একটি নির্দিষ্ট দিনে আয়ুর্বেদ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে এই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্ব আরও বেশি করে তুলে ধরা হবে।
আয়ুশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এতদিন ধনতেরস-এর তারিখ প্রতিবার পরিবর্তিত হওয়ায়, আয়ুর্বেদ দিবসের উদযাপন নিয়মিত ও সুসংগঠিতভাবে করা যাচ্ছিল না। ২০২৫ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে ধনতেরসের তারিখ ১৫ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে—এই অনিশ্চয়তা কাটাতেই এই বড় সিদ্ধান্ত।
এই বিষয়ে আয়ুশ মন্ত্রকের অধীনে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যারা বিকল্প তারিখ খুঁজে বার করেন। তাদের পরামর্শে চারটি সম্ভাব্য তারিখ বিবেচনা করা হয়। সব দিক বিচার করে ২৩ সেপ্টেম্বরকে চূড়ান্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রয়োগিক (practical) নয়, এর মধ্যে রয়েছে এক গম্ভীর প্রতীকী তাৎপর্যও।
২৩ সেপ্টেম্বর হল শরৎকালীন বিষুব (Autumnal Equinox)—একটি জ্যোতির্বিদ্যাগত দিন, যেদিন দিন ও রাত প্রায় সমান। এই দিনটি প্রকৃতির ভারসাম্যের প্রতীক। আয়ুর্বেদের মূল দর্শনও এই ভারসাম্য—মন, শরীর ও আত্মার মধ্যে সুষম অবস্থান বজায় রাখা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এই তারিখ বেছে নেওয়া হয়েছে একটি পরম্পরাগত এবং বিজ্ঞানের সমন্বিত সিদ্ধান্ত হিসেবে।
আয়ুশ মন্ত্রক এও বলেছে, এই নতুন তারিখ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে আয়ুর্বেদকে নতুন পরিচয় দেবে। ভারতের প্রাচীন জ্ঞান-ভাণ্ডারকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। এখন থেকে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সংস্থা, গবেষণা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিকে ২৩ সেপ্টেম্বর আয়ুর্বেদ দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকার মনে করছে, এই নির্দিষ্ট দিন আয়ুর্বেদকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য-আলোচনার অংশ করে তুলতে সাহায্য করবে। এটি শুধু ভারতের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে না, বরং বিকল্প ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহকেও উৎসাহ দেবে। বর্তমান যুগে যেখানে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে আয়ুর্বেদ তার প্রাচীনতর দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন প্রাসঙ্গিকতার জন্য নতুন গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার বরাবরই আয়ুর্বেদ ও অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচার ও প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যেই দেশে ও বিদেশে একাধিক আয়ুর্বেদ বিশ্ববিদ্যালয়, রিসার্চ সেন্টার ও হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। ‘আয়ুশ’ শিল্পও গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে বিকশিত হয়েছে।
এই নতুন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারত আবার প্রমাণ করল, প্রাচীন জ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞান—উভয়ের মিলেই ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।