এলএসি-তে টহলবিরতি শেষ করতে চায় ভারত, ‘আরও সময়’ চাইল চিন

India China Patrolling Moratorium

নয়াদিল্লি গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পাঁচ বছর পার। ২০২০ সালের জুনে লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চিনের সেনাদের রক্তক্ষয়ী মুখোমুখির পর থেকে সরাসরি সংঘর্ষের আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু শান্তির এই দৃশ্যপটের আড়ালে এখনও বহাল রয়েছে টহলবিরতির (moratorium on patrolling) অবস্থা, যা দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত আলোচনার এক অনিবার্য উত্তরাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisements

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সামরিক বৈঠকে ভারত সেই টহলবিরতি প্রসঙ্গ তোলে। ভারতীয় সেনা প্রতিনিধি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন, চুক্তিটি কার্যত এখনও বলবৎ, এবং তার পুনর্মূল্যায়ন সময়ের দাবি। চিনা প্রতিনিধি, সদ্য নিযুক্ত এক নতুন কমান্ডার, উত্তরে জানান, “আরও কিছু সময় প্রয়োজন পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য।”

   

দীর্ঘ এলাকায় টহলবিরতি 

বৈঠকের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এই টহলবিরতি মূলত গৃহীত হয়েছিল প্যাংগং হ্রদের উত্তর তীর, পেট্রোল পয়েন্ট ১৬ ও ১৭-তে, ২০২১ সালের দিকে। প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বিস্তৃত প্যাংগং হ্রদ, যার অর্ধেকেরও বেশি চিনের নিয়ন্ত্রণে, সেই এলাকা বরাবরই ভারত–চিন সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। গত কয়েক বছরে সেখানে কোনও নতুন উত্তেজনার ঘটনা ঘটেনি, যা সীমান্তে একপ্রকার স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তবে, সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ‘স্থিতিশীলতা’ অনেকাংশেই ‘নিয়ন্ত্রিত শান্তি’— কারণ বাস্তবে টহলবিরতি মানে দুই পক্ষই সীমান্ত বরাবর তাদের ঐতিহ্যগত পেট্রোলিং পয়েন্টে যেতে পারছে না। ফলে ‘বাস্তব নিয়ন্ত্রণ রেখা’র (LAC) উপর কার্যত একটি ‘সাইলেন্ট জোন’ তৈরি হয়েছে।

মোদী-জিনপিংয় সাক্ষাৎ India China Patrolling Moratorium

এর মধ্যেই ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎ। বেজিংয়ে সেই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের “নতুন সূচনা” বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনের পাশাপাশি মানসসরোবর যাত্রা পুনরারম্ভ ও নাথুলা করিডর পুনরায় খোলা— এই সিদ্ধান্তগুলিও দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস পুনর্গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Advertisements

ভারতীয় সেনা সূত্রের দাবি, চিনা বাহিনীর উপস্থিতি এখন আগের তুলনায় “সামান্য কমেছে”, যদিও তা পুরোপুরি প্রত্যাহার নয়। ভারতও সীমান্তে তার ৩ নম্বর ডিভিশন ও ইউনিফর্ম ফোর্স-এর মাধ্যমে কৌশলগত প্রস্তুতি জারি রেখেছে।

ভূরাজনীতির প্রতিচ্ছবি

আসন্ন সময়ে WMCC (Working Mechanism for Consultation and Coordination)-এর বৈঠকেই দুই পক্ষের পরবর্তী আলোচনার রূপরেখা নির্ধারিত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক মহলে এক প্রবীণ বিশ্লেষকের মন্তব্য, “গালওয়ানের রক্তক্ষয় থেকে এখনকার নীরবতা— দুই পর্বই একই ভূরাজনীতির প্রতিচ্ছবি। এই নীরবতা শান্তি নয়, বরং এক সতর্ক প্রতীক্ষা। সীমান্তে সত্যিকারের স্থিতি তখনই আসবে, যখন উভয় সেনা নিজ নিজ ঘাঁটিতে ফিরে যাবে।”

পাঁচ বছর আগে যে উপত্যকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, আজ সেখানে নেমে এসেছে কৌশলগত নীরবতা। কিন্তু লাদাখের সেই বরফঢাকা পর্বতগুলো এখনও যেন জানিয়ে দেয়— বাস্তব নিয়ন্ত্রণ রেখা কখনোই সম্পূর্ণ ‘স্থির’ থাকে না, কেবল কিছু সময়ের জন্য নিঃশব্দ হয়ে যায়।