নয়াদিল্লি, ৩ ডিসেম্বর: অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর জনগণনার (India Census Notice 2025) নোটিস দিল মোদী সরকার। ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষায় ছিল এই মুহূর্ত। কোভিডের ছায়া, রাজনৈতিক টানাপোড়েন আর প্রশাসনিক জটিলতার মাঝে আটকে গিয়েছিল ভারতের জনগণনা। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের মুখে সেই অপেক্ষার অবসানের ঘোষণা এল।
মোদী সরকার নিশ্চিত করেছে, ২০২৭ সালে দেশব্যাপী জনগণনা হবে, দু’দফায় বিভক্ত। প্রথম ধাপে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৬-এ বাড়িঘর তালিকাভুক্তকরণ এবং আবাসন জরিপ, আর দ্বিতীয় ধাপে ফেব্রুয়ারি ২০২৭-এ জনসংখ্যা গণনা। রেফারেন্স ডেট ১ মার্চ ২০২৭, কিন্তু লাদাখ এবং তুষারাবৃত এলাকাগুলোতে সেপ্টেম্বর ২০২৬-এ হবে, রেফারেন্স ১ অক্টোবর। এই ঘোষণা শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটা মাইলফলক।
রেড-কার্পেটে চা বিক্রি করছেন মোদী? কংগ্রেসের AI ভিডিও ঘিরে তীব্র বিতর্ক
২০১১ সালের পর থেকে দেশের জনসংখ্যা কত বেড়েছে? কীভাবে বদলে গেছে আমাদের সমাজ, অর্থনীতি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ছাড়া সরকারের হাত-পা বাঁধা। মূলত ২০২১-এ শুরু হওয়ার কথা ছিল জনগণনার—প্রথম ধাপে বাড়িঘর সমীক্ষা, দ্বিতীয় ধাপে জনগণনা। কিন্তু কোভিড মহামারী সবকিছু থামিয়ে দিল। লকডাউনের মধ্যে লক্ষ লক্ষ কর্মী-কর্মচারী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লেন, আর সেই সুযোগে বিপক্ষ দলগুলো অভিযোগ করতে লাগলেন যে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছে।
বিশেষ করে জাতিগত গণনার দাবি উঠতেই রাজনৈতিক ঝড় উঠল। বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী আজ লোকসভাতেই প্রশ্ন তুললেন, ‘কবে হবে জনগণনা? জাতিগত তথ্য কি অন্তর্ভুক্ত হবে?’ নিত্যানন্দ রাইয়ের জবাবে স্পষ্টতা এল—হ্যাঁ, জাতিগত গণনা হবে, ক্যাবিনেটের ৩০ এপ্রিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে। এটা প্রথমবারের মতো জাতি-ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ হবে, যা সমাজের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটা। বাবাসাহেব অম্মেদকরের স্বপ্নের ভারতে এই তথ্য কতটা পরিবর্তন আনবে, সেটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়।
প্রথম ধাপ, বাড়িঘর তালিকাভুক্তকরণ, ২০২৬-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩০ দিনের মধ্যে শেষ হবে। রাজ্য সরকারগুলোর সুবিধামতো তারিখ ঠিক হবে। এখানে শুধু বাড়িঘরের তথ্য নয়, আবাসনের অবস্থা, সুবিধা-সামগ্রীর বিস্তারিত জরিপ হবে। দ্বিতীয় ধাপে, ফেব্রুয়ারি ২০২৭-এ জনগণনা—রাত ১২টায় ১ মার্চের রেফারেন্সে। কিন্তু হিমালয়ের কোলে থাকা লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ আর উত্তরাখণ্ডের তুষারাবৃত এলাকাগুলোতে আগেই হবে, সেপ্টেম্বর ২০২৬-এ, ১ অক্টোবর রেফারেন্সে।
কারণ সেখানে শীতকালে পৌঁছানো অসম্ভব। এবারের জনগণনা ডিজিটাল হবে—মোবাইল অ্যাপ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ, সেলফ-ইনুমারেশনের সুযোগ। গত নভেম্বরে প্রি-টেস্ট হয়েছে, যাতে প্রশ্নপত্রের ফাইনালাইজেশন হয়েছে। প্রায় ৩৪ লক্ষ গণক এবং তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হবে, যারা শিক্ষক, কেরানি বা স্থানীয় কর্মচারী হবেন। খরচ? প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
