২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় (MEA) মোট ২০,৫১৬ কোটি টাকার বাজেট (India Budget 2025) ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে বিদেশি সহায়তার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫,৪৮৩ কোটি টাকা। যদিও গত বছরের তুলনায় বিদেশি সহায়তার পরিমাণ সামান্য হ্রাস পেয়েছে (২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ৪,৮৮৩.৫৬ কোটি টাকা), তবে প্রতিবেশী ও কৌশলগত অংশীদারদের জন্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের জন্য সহায়তার কোনো বৃদ্ধি নেই
বাংলাদেশের জন্য ভারতের আর্থিক সহায়তা ১২০ কোটি টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যা গত বছরের সমান। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সহায়তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত প্রস্থান এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া পরবর্তী কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের দাবি তোলা হয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারতের ভূমিকা
বাংলাদেশ বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে এক অস্থিতিশীল সময় পার করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং মুহাম্মদ ইউনুসের ক্ষমতায় আসার ফলে দেশে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন গভীর হয়েছে। শেখ হাসিনার ভারত গমন ও সেখানকার সরকার কর্তৃক তাকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই শক্তিশালী হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের দাবি ও ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা নিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। এ অবস্থায় ভারতের বাজেট বাংলাদেশকে অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কূটনৈতিক ভারসাম্যের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ভারতের বাজেট
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের জন্যও বাজেটে সহায়তা রেখেছে। নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দের মূল লক্ষ্য ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিরুদ্ধে ভারসাম্য তৈরি করা।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত তার কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তিতে সহায়তা অব্যাহত রাখলেও, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শেখ হাসিনার অবস্থান নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের এই সহায়তার স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপ্রবাহের উপর নির্ভর করবে।
শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ ও কূটনৈতিক সম্ভাবনা
বর্তমানে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ভারত যদি তাকে দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয় দেয়, তবে এটি বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, যদি ভারত শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় আসে, তবে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, ভারতের বাজেট বরাদ্দ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে এটি কতটা কার্যকর হবে তা এখনই বলা কঠিন। আগামী মাসগুলোতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন পথে এগোবে, তা নির্ভর করবে এই বরাদ্দের বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর।