ভারতের সীমান্ত (India Bangladesh Border) সুরক্ষা বাহিনী (BSF) এবং বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (BGB) এর মধ্যে ৫৫তম ডিজি স্তরের সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন দিল্লিতে শুরু হয়েছে। চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এবং এটি উভয় দেশের সীমান্ত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ সম্মেলনে ভারতীয় BSF প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলজিত সিং চাওধারি, যিনি BSF এর ডিজি। অপরদিকে বাংলাদেশী BGB প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, যিনি BGB এর ডিজি। উভয় পক্ষের মধ্যে এই সম্মেলনে আলোচনা হবে সীমান্তে নিরাপত্তা, অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, সীমান্ত এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ এবং অবাধ ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত।
সম্মেলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
৫৫তম ডিজি স্তরের সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এতে সীমান্তে অস্থিরতা বা সংঘর্ষ প্রতিরোধের জন্য যৌথভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, দুটি দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী একে অপরকে সহযোগিতা এবং শক্তিশালী করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সম্মেলনে সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি, দুই বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি নিয়ে আলোচনা করা হবে। “কোঅর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান” (CBMP) এবং “কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস” (CBM) এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হবে।
এছাড়া, সীমান্তের উন্নয়নমূলক কাজ এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। দুই দেশের সীমান্তে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা, মাদক চোরাচালান, মানব পাচার এবং অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিরোধেও উভয় বাহিনীর মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন ও BSF প্রতিনিধি দল
সম্মেলনের প্রথম দিন, ১৭ ফেব্রুয়ারি, BSF এর ডিজি ডালজিত সিং চাওধারি, বাংলাদেশের BGB ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। উভয় বাহিনীর মধ্যে এই সম্মেলন ভারী গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়গুলির উপর গুরুতর মনোযোগ প্রদান করবে এবং আগামী দিনে আরও শক্তিশালী ও সুষ্ঠু সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করবে।
BSF তাদের এক পোস্টে জানিয়েছে, “৫৫তম সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী-সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ডিজি স্তরের সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।” এছাড়া, BSF আরও জানায়, “ডালজিত সিং চাওধারি, BSF ডিজি, বাংলাদেশের BGB ডিজি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং তাঁর প্রতিনিধি দলকে IGI বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছেন।”
উভয় বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন
৫৫তম সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলন শুধু সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নয়, বরং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় সম্পর্কের উন্নয়ন এবং আস্থা সৃষ্টি করার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। উভয় দেশের বাহিনী একে অপরের সহযোগিতা এবং জ্ঞান শেয়ার করার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত করবে।
এ সম্মেলন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করবে, যার ফলে ভবিষ্যতে সীমান্ত সুরক্ষা আরও কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা যাবে। সম্মেলন চলাকালীন, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশই নিজেদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে যে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে এবং নতুন উদ্যোগের জন্য সুপারিশ করবে।
সীমান্ত সুরক্ষা: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যেমন সীমান্ত পেরিয়ে মাদক পাচার, অবৈধ প্রবেশ, সীমান্তে উত্তেজনা, এবং অস্ত্র ও মানব পাচার। এই সমস্যাগুলি দুই দেশের মধ্যে একটি স্থিতিশীল সম্পর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। তবে, ৫৫তম ডিজি স্তরের সীমান্ত সম্মেলন থেকে আশা করা হচ্ছে যে, এটি উভয় পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা আরও সুসংহত করবে এবং সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করবে।
এছাড়া, এই সম্মেলন দুটি দেশের জন্য একটি মঞ্চ হতে পারে যাতে তারা একে অপরের সাথে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি মূল ভিত্তি, এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য উভয় দেশের বাহিনী মিলে কাজ করবে।
সম্মেলনের সমাপ্তি এবং যৌথ আলোচনা
সম্মেলনের শেষ দিন, ২০ ফেব্রুয়ারি, দুই বাহিনীর ডিজিরা একটি যৌথ আলোচনা সেশন করবেন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত রেকর্ড সাইন করবেন। এর মাধ্যমে, উভয় বাহিনী তাদের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য একযোগভাবে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। এই সম্মেলন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।