বাংলাদেশের বয়কটে ভারতের মুসলিমদের ক্ষতি!

India-Bangladesh trade relations: ভারতের ভিসা বন্ধ। ভারতে বাংলাদেশি রোগী আসা বন্ধ। সরকারের কোষাগারে প্রভাব পড়েছে। তবে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়। আরও…

India-Bangladesh Muslim Businesses in West Bengal

short-samachar

India-Bangladesh trade relations: ভারতের ভিসা বন্ধ। ভারতে বাংলাদেশি রোগী আসা বন্ধ। সরকারের কোষাগারে প্রভাব পড়েছে। তবে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়। আরও ভালোভাবে বললে বাংলাদেশের বয়কটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভারতের মুসলিম ব্যবসায়ীরা।

   

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক বহু দশক ধরে বিশেষভাবে আন্তরিক। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফলে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় ভিসা বর্জন এবং সীমিত পর্যায়ে বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ভারতীয় মুসলিম ব্যবসায়ীদের উপর বড় ধাক্কা দিয়েছে।

ভারতে বাংলাদেশিদের প্রবেশ বন্ধ: প্রভাব কীভাবে পড়ছে?
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ভ্রমণ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষত চিকিৎসা ও ব্যবসার কারণে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আসতেন, তাঁদের আনাগোনা বন্ধ হওয়ার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ব্যবসায়ীরা। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, নিউ মার্কেট, এবং খিদিরপুর অঞ্চলে বাংলাদেশিদের যাতায়াত ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই অঞ্চলগুলিতে থাকা হোটেল, রেস্তোরাঁ, এবং পোশাক শিল্পের ব্যবসার মূল ক্রেতা ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিকরা, যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম।

বাংলাদেশি রোগীরা, যাঁরা উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতা এবং দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালগুলিতে আসতেন, তাঁদের থাকার জন্য নির্ভর করতেন মুসলিম ব্যবসায়ীদের পরিচালিত হোটেলগুলির উপর। এছাড়াও, খাবারের জন্য তাঁরা বিশেষভাবে হালাল খাবারের রেস্তোরাঁর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যবসাগুলি প্রায় মন্দার সম্মুখীন হয়েছে।

বাংলাদেশি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল: ভারতীয় ব্যবসায়ের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সফল। এই শিল্পের জন্য দরকারি কাঁচামালের একটি বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গের খিদিরপুর এবং বেনিয়াপুকুর অঞ্চল থেকে সরবরাহ করা হত। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে মুসলিম ব্যবসায়ীরা এই কাঁচামাল সরবরাহে প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু বর্তমানে সীমান্ত বাণিজ্যের সীমিত কার্যক্রম এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভারতে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা এই ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

মালদা এবং মুর্শিদাবাদের মতো অঞ্চলগুলিতে ব্যবসায়িক ক্ষতির প্রভাব আরও স্পষ্ট। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন যে বাংলাদেশি ক্রেতাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাঁদের আয়ের বড় অংশ হারিয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই ধরনের সংকট আরও গভীর হয়েছে কারণ এখানকার ব্যবসা সরাসরি বাংলাদেশি ক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল ছিল।

ধর্মীয় কারণে মুসলিম ব্যবসায়ীদের ক্ষতি
বাংলাদেশি মুসলিম পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা সাধারণত ধর্মীয় দিক থেকে হালাল খাবার খোঁজেন এবং মুসলিম পরিচালিত হোটেল বা রেস্তোরাঁতেই খেতে পছন্দ করেন। তাই তাঁদের অনুপস্থিতিতে এই ধরনের ব্যবসাগুলির আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। নিউ মার্কেট এবং পার্ক সার্কাসের বহু হোটেল ও খাবারের দোকান বর্তমানে খালি পড়ে আছে। কিছু ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন।

সরকারি কোষাগারের প্রভাব
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের প্রভাব শুধু মুসলিম ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। চিকিৎসা পর্যটন এবং বাণিজ্যিক পর্যটনের কারণে ভারত সরকারের কোষাগারেও এই সম্পর্ক থেকে একটি বড় অঙ্কের রাজস্ব আসত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা তলানিতে নেমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্বে ধাক্কা লেগেছে।

বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের অবস্থান
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্য বাংলাদেশ এখনও ভারতীয় পণ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সীমান্ত বাণিজ্য আংশিক চালু থাকায় কিছুটা পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি যোগাযোগের অভাব বাণিজ্যের গতি শ্লথ করে দিয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি: সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে এই বাণিজ্যিক ও সামাজিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করা প্রয়োজন। সরকারগুলির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করতে হলে সীমান্ত বাণিজ্য এবং ভিসা পরিষেবাগুলি দ্রুত স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার বর্তমান সংকট শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, এর গভীর প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে তাঁদের জন্য এই সম্পর্ক পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকারের উচিত এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা।