নয়াদিল্লি: ভারতের তীরন্দাজরা গত এশিয়ান আর্চারি (India archery) চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ এক অসাধারণ অধ্যায় লিখে গেল। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দল মোট ১০টি পদক জিতে দেশে ফিরেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৬টি স্বর্ণ, ৩টি রৌপ্য এবং ১টি ব্রোঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় আর্কারি টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “এটি শুধুমাত্র একটি ক্রীড়া সাফল্য নয়—এটি আগামী প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের জন্য উদ্দীপনার উৎস হবে।”
বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে পুরুষ টিমের স্বর্ণ জয়। অতনু দাস, যশদীপ ভোগে ও রাহুল-এর সমন্বয়ে গঠিত এই দল ১৮ বছর পর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-এ রিকর্ভ টিম স্বর্ণ জিতেছে। পরিশিষ্টে তাদের সাফল্য সেই পুরনো দিনের গৌরব ফিরে এনে দিয়েছে। ফাইনালে তারা শুট-অফে দ.কোরিয়াকে হারিয়ে ৫–৪ স্কোরে শিরোপা জিতে নিয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অতনুর শেষ তীর, যা সঠিকভাবে কেন্দ্রভেদে যায় এবং ভারতের জয় নিশ্চিত করে।
ভারতের অগ্নি সহ এই ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণ করে
পুরুষ একক বিভাগেও ধীরাজ বোম্মাদেভারা ইতিহাস তৈরি করেছেন। তিনি ফাইনালে কোটিপতি প্রতিযোগী রাহুলকে ৬–২ সেট স্কোরে পরাজিত করে স্বর্ণ জিতে নিয়েছেন। তাঁর দৃঢ় মনোযোগ এবং শীতল মাথার কৌশল দলের জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মহিলা রিকর্ভ বিভাগে অঙ্কিতা ভাকাট বিশেষ আলোড়ন তৈরি করেছেন। তিনি প্যারিস অলিম্পিক সিলভার মেডালিস্ট নাম স্যু-হেয়ন (দ.কোরিয়া)-কে শিরোপা-রাউন্ডে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতায় আচার্য নেতৃত্ব দেখিয়েছেন।
এছাড়া সংগীতা নামের আরেক তরুণ তীরন্দাজও ব্রোঞ্জ পদক জিতে দলের পদক গড়কে শক্ত করেছে। মহিলা কমপাউন্ড টিম – জ্যোথি সুরেখা ভেন্নম, দীপশিখা এবং প্রিথিকা প্রদীপ – কোরিয়ার কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতে নিয়েছেন। মিক্সড কমপাউন্ড টিমেও অভিষেক ভেরমা ও দীপশিখা যৌথভাবে শীর্ষ স্থান দখল করেছেন।
এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ভারতের দীর্ঘ দিনের অধ্যাবসায়, প্রশিক্ষণ কাঠামোর উন্নয়ন এবং ক্রীড়াবিদদের আত্মবিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী মোদীর অভিনন্দন বার্তায় সংক্ষেপে বলা হয়, “তোমাদের এই সাফল্য শুধু তোমাদের নয়, পুরো দেশের গর্ব। ভবিষ্যৎ দিনের নতুন প্রতিভাবান তরুণরা নিশ্চয়ই তোমাদের দেখানো পথ থেকে অনুপ্রাণিত হবে।”
আর্কারি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (AAI) ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে যে, এই প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা আগামী আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও মজবুত করবে। তরুণ ও অভিজ্ঞ সব তীরন্দাজদের একসাথে মিশ্রণ ভারতীয় আর্কারদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের কন্টিনেন্টাল সাফল্য ভারতের স্পোর্টস নীতি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নের কুল চিহ্ন। বিশেষত, রিকর্ভ এবং কমপাউন্ড – দুই বিভাগে সমান শক্তি থাকা ভারতের কূটনৈতিকভাবে ক্রীড়ামঞ্চে প্রতিযোগিতামূলক প্রভাব বাড়াচ্ছে।
এটি কেবল পদক গড়ার গল্প নয়, পারফরম্যান্স ও পরিকল্পনার প্রতিফলন। একটি কথা স্পষ্ট – এই উজ্জ্বল অধ্যায় ভারতের আর্কারি ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর মোদীর উচ্ছ্বাস, একভাগ উল্লাস না হয়ে উঠুক অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়ে, আগামী দিনের নতুন প্রতিভাবানদের মধ্যে শক্তি জাগাক।


