নয়াদিল্লি: ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় রফতানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর দু’দেশের সম্পর্কে শীতলতা নেমেছিল৷ আজ মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে শুরু হতে চলা বাণিজ্য বৈঠক সেই অচলাবস্থা কাটাতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷
আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করবেন লিঞ্চ
দিনভর এই বৈঠকে আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করবেন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ, আর ভারতের তরফে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রকের শীর্ষকর্তা রাজেশ আগরওয়াল। কূটনৈতিক মহলের মতে, বহুবার স্থগিত হওয়ার পর অবশেষে আলোচনার টেবিলে বসা—দু’দেশের সম্পর্কের এক ইতিবাচক সংকেত।
ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশ্যে আশাবাদী হয়েছেন যে ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি খুব শিগগিরই সম্ভব। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মন্তব্য করেছেন, এই আলোচনাই ভারত–আমেরিকা অংশীদারিত্বের “অসীম সম্ভাবনার দ্বার” খুলে দিতে পারে।
পাঁচ দফা আলোচনাতেও মূল জট অটুট India-America Trade Dispute
তবে সমীকরণ এতটা সহজ নয়। ইতিমধ্যেই পাঁচ দফা আলোচনা হলেও মূল জট অটুট। ওয়াশিংটন চাইছে ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ বাজারে আরও প্রবেশাধিকার, যা নয়াদিল্লির কাছে স্পষ্ট ‘লাল দাগ’। এই দ্বন্দ্বের জেরেই আগস্টের শেষ সপ্তাহে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফার বৈঠক পিছিয়ে যায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের আগের অবস্থান ছিল চরম আক্রমণাত্মক। বিদ্যমান শুল্কের উপর বাড়তি ২৫ শতাংশ আরোপ করার পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পিটার নাভারো সরাসরি ভারতকে ‘ক্রীমলিনের মানি লন্ড্রির আখড়া’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। নয়াদিল্লি অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়েছে—রাশিয়ার সঙ্গে তাদের জ্বালানি ব্যবসা কোনও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে না। পশ্চিমা দেশগুলিকেই ভণ্ডামির দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে ভারত, দেখিয়ে দিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকাই এখনও রাশিয়া থেকে কোটি কোটি ডলারের পণ্য কিনছে।
শুল্কযুদ্ধ ও কটূক্তি
ফলে, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা শুল্কযুদ্ধ ও কটূক্তি সম্পর্ককে তলানিতে ঠেলে দিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে নয়াদিল্লি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে শুরু করে, এমনকি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বেজিংয়ের সঙ্গেও উষ্ণতা বাড়ায়। তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন সামিটে সেই চিত্র দেখে উদ্বিগ্ন হন ট্রাম্প। শেষমেশ ভারতের প্রতি সুর নরম করে তিনি রাশিয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ সরিয়ে দেন চীনের দিকে।
এই প্রেক্ষাপটে আজকের বৈঠক নিছক বাণিজ্য আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে কৌশলগত বার্তা বহন করছে। ভারতের কাছে এটি জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ, আর আমেরিকার কাছে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ধরে রাখার শেষ চাবিকাঠি।
Bharat: India and the US resume crucial trade talks in New Delhi to resolve tariff disputes and improve bilateral ties. A delegation led by Brendan Lynch is meeting with Indian officials to address key issues, including market access and energy trade. The outcome could define future relations.