সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী জোটের নেতৃত্বের প্রশ্নটি বেশ জোরালো ভাবে উঠেছে। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ইন্ডিয়া জোটের নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন এবং এই নেতৃত্বের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নাম সামনে আনা হয়েছে।
তদন্তে আস্থা নেই, নতুন করে হাইকোর্টে মামলা অভয়ার বাবা-মায়ের
এই দাবি সঙ্গত কারণেই সমর্থন পেয়েছে অ-কংগ্রেসি বিরোধী দলগুলির কাছ থেকে। বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় এবং সমালোচনা রয়েছে, সেখানে তৃণমূলের এহেন প্রস্তাব বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের দিকে একাধিক বিরোধী দলের সদস্যদের আগ্রহ অনেকদিন ধরেই তৈরি হয়ে ছিল, এবং শীতকালীন অধিবেশনেই তা স্পষ্ট হয়েছে।
তৃণমূলের সাংসদরা সংসদে প্রথমে এই প্রস্তাব দেন যে, ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রয়োজন। তাদের মতে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে বর্তমান বিরোধী জোট অত্যন্ত দুর্বল এবং সমন্বয়ের অভাবে একাধিক রাজ্যে জোটের কার্যক্রম ম্লান হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে যেমন ক্ষমতাসীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তেমনি তিনি জাতীয় রাজনীতিতেও নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। তার নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অন্যান্য রাজ্যেও বিরোধী দলগুলির মধ্যে একতা আনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতে ক্যাম্পাস করছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
তৃণমূলের এই প্রস্তাবের প্রতি সাড়া দিয়েছেন একাধিক অ-কংগ্রেসি বিরোধী দল। তারা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এক ধরনের দৃঢ়তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে, যা বিরোধী জোটকে একটি কার্যকরী এবং শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে পারে। বিশেষত, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে এই দাবি তোলার পেছনে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় রাজনীতিতে মমতার ভূমিকার প্রতি আস্থা।
তবে কংগ্রেসের মধ্যে এই প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে। কংগ্রেসের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, তারা এই প্রস্তাব মেনে নেবে না। কংগ্রেসের বক্তব্য, ইন্ডিয়া জোট একটি সমষ্টিগত প্রয়াস এবং তাদের দল এর নেতৃত্বের বিষয়ে কোনো পরিবর্তন করতে চায় না। কংগ্রেসের নেতারা মনে করছেন, বিরোধী জোটের লক্ষ্য হল একত্রিত হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, এবং সেই কাজটা তারা কংগ্রেসের নেতৃত্বেই চালিয়ে যাবে। তবে, কংগ্রেসের এই অবস্থান বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
তৃণমূলের নেতৃত্বের দাবি, বিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে গেলে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাদের যুক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন সফল মুখ্যমন্ত্রী, তার শাসনকালের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং উন্নতির দিকে এগিয়েছে। তাই জাতীয় স্তরের বিরোধী আন্দোলনেও তার নেতৃত্ব জরুরি।
সাময়িক বাড়ি ফিরবেন দিল্লি দাঙ্গায় অভিযুক্ত উমর খালিদ
এদিকে, আগামী দিনের রাজনীতির দিক নির্দেশনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। যদিও কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে বিরোধিতা রয়েছে, তবুও বিরোধী দলের একত্রিত হওয়া এবং বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকরী লড়াই চালানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সব মিলিয়ে, সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বিরোধী রাজনৈতিক জোটের ভবিষ্যৎ এবং নেতৃত্ব প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।