ভারতজুড়ে বাঘ সংরক্ষণে সরকারের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অবশেষে ফল দিচ্ছে। ২০০৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশের মোট বাঘের সংখ্যা (Tiger population in India) দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৩৬৮২। ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (NTCA) এবং টাইগার ইনডেক্স ইন্ডিয়া (TII)-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ভারতের অগ্রণী ভূমিকারই প্রমাণ।
রাজ্যভিত্তিক চমকপ্রদ পরিসংখ্যান
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বেশ কয়েকটি রাজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে সফল হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ এখন দেশের ‘টাইগার স্টেট’—২০০৬ সালে যেখানে ৩০০টি বাঘ ছিল, সেখানে ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৭৮৫-এ, যা ১৬২ শতাংশ বৃদ্ধি।
তামিলনাড়ুতে ৭৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০৬টি বাঘ (৩০৩% বৃদ্ধি), কেরালায় ৪৬ থেকে ২১৩ (৩৬৩%), মহারাষ্ট্রে ১০৩ থেকে ৪৪৪ (৩৩১%), এবং উত্তরাখণ্ডে ১৭৮ থেকে ৫৬০ (২১৫%)। আসামও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে—৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২২৯টি বাঘ, যা ২২৭ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে
অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার ক্ষেত্রে ছবিটা অন্যরকম। ২০০৬ সালে যেখানে ৯৫টি বাঘ ছিল, সেখানে ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৪-এ, অর্থাৎ ১২ শতাংশ হ্রাস। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতনের পেছনে বনভূমি হ্রাস, মানব-অবস্থান বিস্তার, এবং পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব অন্যতম কারণ।
পশ্চিমবঙ্গের চিত্র
পশ্চিমবঙ্গের বাঘ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নিয়ে প্রায়ই অনিশ্চয়তা থাকে, কারণ সুন্দরবনের একটা বড় অংশ পড়ে বাংলাদেশে। তবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে রাজ্যে ৮৮টি বাঘ ছিল। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১০১টি।
এই অগ্রগতি বিশেষ করে সুন্দরবনের মতো প্রতিকূল জায়গায় যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে জলস্তর বৃদ্ধি, নদীভাঙন ও মানব-বাঘ দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের যৌথ উদ্যোগের সুফল হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
‘প্রজেক্ট টাইগার’-এর সাফল্য
১৯৭৩ সালে শুরু হওয়া ‘প্রজেক্ট টাইগার’ ভারত সরকারের অন্যতম সফল সংরক্ষণমূলক প্রকল্প। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও এটি ভারতের বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের মূল স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাঘ রক্ষায় বন রক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার (যেমন ড্রোন, ক্যামেরা ট্র্যাপ, জিপিএস ট্র্যাকিং), এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে সংযুক্ত করার ফলে আজ এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।
মানব-বাঘ দ্বন্দ্ব ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বাঘের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানব-বাঘ সংঘর্ষের ঘটনাও। বিশেষ করে সুন্দরবন, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে গ্রামীণ মানুষদের জীবনে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাই এখন দরকার ভারসাম্যপূর্ণ নীতি—যেখানে বাঘের সংরক্ষণ ও মানুষের জীবিকাবোধের মধ্যে সমন্বয় ঘটবে।
ভারতের বাঘ সংরক্ষণ এক আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে যেমন সাফল্য রয়েছে, তেমনই সংরক্ষণনীতি ও সামাজিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও ভারত পথপ্রদর্শক। আগামী দিনে এই ধারা বজায় রেখে পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখাই হবে মূল লক্ষ্য।