কলকাতা: আমেরিকা, চিন ও রাশিয়া ইতিমধ্যেই ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ এই অবস্থায় ভারতও আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। অতীতের মতো বিলম্ব এড়িয়ে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF)। দেশীয়ভাবে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট’ (AMCA) প্রকল্প এগোচ্ছে জোরকদমে। কিন্তু তার সঙ্গেই সমান্তরালে ভবিষ্যতের অর্থাৎ ষষ্ঠ প্রজন্মের- যুদ্ধবিমান তৈরির দিকেও নজর রাখছে ভারত।
ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রযুক্তির প্রস্তুতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পূর্ণ কার্যক্ষম পঞ্চম প্রজন্মের বিমান তৈরিতে আরও আট থেকে দশ বছর সময় লাগতে পারে। সেই ফাঁকেই ভারত শুরু করেছে ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রযুক্তির প্রস্তুতি, যার মধ্যে রয়েছে ‘ডিপ স্টেলথ’ সিস্টেম, মানড-আনম্যানড টিমিং, লেজার অস্ত্র, ও “স্মার্ট স্টেলথ স্কিন” প্রযুক্তি। এই উন্নত ব্যবস্থা ভবিষ্যতের যুদ্ধবিমানকে রাডারে প্রায় অদৃশ্য করে তুলবে, একই সঙ্গে বাড়াবে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা ক্ষমতা।
সম্প্রতি এক প্রতিরক্ষা সম্মেলনে এয়ার মার্শাল অবধেশ কুমার ভরতি বলেছেন, “যখন পঞ্চম প্রজন্মের প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২৫ বছর আগে, তখন আমরা অপেক্ষা করেছিলাম। এবার আর ২৫ বছর অপেক্ষা করা চলবে না।” তাঁর এই বক্তব্য বায়ুসেনার দৃঢ় অবস্থানকেই প্রকাশ করে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ প্রযুক্তিতে এবার দেরি নয়, বরং গতি চাই।
২০২৮ সালের মধ্যে উড়ান দেবে AMCA-র প্রোটোটাইপ India 6th Generation Fighter
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ধাপে ধাপে এগোতে চায়। প্রথম ধাপে ২০২৮ সালের মধ্যে উড়ান দেবে AMCA-র প্রোটোটাইপ। তার পরেই শুরু হবে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পের গবেষণা ও উন্নয়ন, যা একই প্রযুক্তিগত ভিত্তির উপর নির্ভর করবে। নতুন প্রজন্মের এই বিমানে থাকবে পাইলটবিহীন অপারেশন, দেশীয় ইঞ্জিন, ক্লিন এনার্জি সিস্টেম, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে লেজার ডিফেন্স, এবং উন্নত ‘স্মার্ট স্কিন’ প্রযুক্তি।
প্রয়োজন বিপুল বিনিয়োগ
এদিকে বিশ্বের অন্য বড় শক্তিগুলো ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Next Generation Air Dominance (NGAD) প্রোগ্রাম, চিনের FC-31 প্রকল্প, ও রাশিয়ার PAK DP প্রজেক্ট এখন উন্নত পর্যায়ে। ভারতের জন্য তাই এটি কেবল সামরিক আধুনিকীকরণ নয়, বরং প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতা, কৌশলগত স্বাধীনতা, এবং আঞ্চলিক ভারসাম্যের দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করতে লাগবে বিপুল বিনিয়োগ, কঠোর সময়সীমা মেনে কাজ, এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার। তবে ভারতীয় বায়ুসেনা বিশ্বাস রাখছে— নতুন কৌশল, দেশীয় গবেষণা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সমন্বয়ে এবার সত্যিই শুরু হচ্ছে ভারতের next leap in air power।