নয়াদিল্লি: ভারত সাম্প্রতিককালে সামরিক শক্তি আরও শক্তিশালী করার জন্য একটি বিরাট পদক্ষেপ নিচ্ছে। খবরের মতে, ভারত সরকার ২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১১৪টি উন্নত রাফায়েল যুদ্ধ বিমান তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার বেশিরভাগ অংশ দেশীয়ভাবে উৎপাদন (Make in India) করা হবে। এই প্রকল্পটি “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হবে এবং এটি দেশের বিমান বাহিনীর মজবুতীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ফরাসি কোম্পানি ডাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে সহযোগিতায় এই বিমানগুলো তৈরি হবে, যার মধ্যে ৬০% অংশ ভারতীয় প্রযুক্তি ও উৎপাদন ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হবে।
এই প্রস্তাবটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর উদ্যোগে প্রস্তুত হয়েছে এবং বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। প্রকল্পটি প্রথমে রক্ষণাবেক্ষণ ক্রয় বোর্ডের কাছে যাবে, এরপর রক্ষণাবেক্ষণ অধিগ্রহণ পরিষদের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই চুক্তিটি সফল হলে ভারতের বিমান বাহিনীতে রাফায়েল বিমানের সংখ্যা ১৭৬-এ পৌঁছে যাবে, যার মধ্যে ৩৬টি ইতিমধ্যেই সক্রিয় এবং নৌবাহিনীর জন্য আরও ৩৬টি আদেশ দেওয়া হয়েছে।” এই বিমানগুলোর মধ্যে ১৮টি ফ্রান্স থেকে প্রস্তুত অবস্থায় আনা হবে, বাকি ৯৬টি ভারতের মধ্যেই তৈরি হবে, যা দেশীয় শিল্পক্ষেত্রে চাকরি সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মে ২০২৫-এ পাকিস্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া “অপারেশন সিন্দুর” অভিযানে রাফায়েল বিমানের সফলতা। এই অভিযানে রাফায়েল বিমান চিনের উন্নত এল-১৫ বায়ু-বায়ু ক্ষেপণাস্ত্রকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যা এর শক্তিশালী ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা “স্পেকট্রা” এর কার্যকারিতা প্রমাণ করে। এই সাফল্যের পর ভারত সরকার এই বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় আরও শক্তি যোগাবে। উন্নত এফ৪.১ স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি এই বিমানগুলোতে ভারত-নির্দিষ্ট উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে, যা এটিকে এলাকার অন্যান্য বিমানের তুলনায় সুন্দর করে তুলবে।
সামাজিক মাধ্যমে এই প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ পাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এই বিশাল বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে পারে, আবার অনেকে বিশ্বাস করছেন যে এটি ভারতের স্বনির্ভরতা ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডাসো অ্যাভিয়েশন হায়দ্রাবাদে একটি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহল (এমআরও) কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে, যা ভারতীয় শিল্পের জন্য নতুন দ্বার খুলে দেবে। তাৎক্ষণিক চুক্তি স্বাক্ষর হলে ২০২৬ থেকে বিমান সরবরাহ শুরু হতে পারে, যা ভারত-পাকিস্তান ও ভারত-চিন সীমান্তে চলমান চাপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগে রাফেল যুদ্ধ বিমান বানাবে ভারত 🇮🇳✈️ | মেক ইন ইন্ডিয়া প্রতিরক্ষা শক্তি\https://t.co/a25AvIVRyD pic.twitter.com/wtmpUzO1y3
— Kolkata24x7 (@ekolkata24x7) September 18, 2025
এই প্রকল্পটি শুধু সামরিক শক্তি বাড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তি উন্নয়নে গভীর প্রভাব ফেলবে। দেশীয় শিল্পের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং ফরাসি প্রযুক্তির সঙ্গে ভারতীয় উদ্ভাবনের সমন্বয় এই বিমান তৈরির মাধ্যমে সম্ভব হবে। তবে, এই বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার ও গুণমান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এর ফলাফল দেশের জনগণের জন্য সুফলদায়ক হয়। ভারতের এই পদক্ষেপ বিশ্বের মঞ্চে এর সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির পরিচয় দিতে প্রস্তুত।