নয়াদিল্লি, ১৮ নভেম্বর ২০২৫: দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লার কাছে গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়ি বোমা হামলা এখনও দেশের রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলছে। এই হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অসংখ্য লোক আহত হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমার ডা. মহম্মদ উমরকে নিয়ে কংগ্রেসের সাংসদ ইমরান মাসুদের সাম্প্রতিক বক্তব্য রাজনৈতিক বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মাসুদকে উমরকে ‘ভুলপথগামী যুবক’ বলে উল্লেখ করে তাঁর ছবি ‘দোষ ঢাকার চেষ্টা করতে দেখা গেছে, যা বিজেপি এবং অন্যান্য দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। এই ঘটনা কেবল আতঙ্কবাদের বিরুদ্ধে দেশের লড়াইকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও গভীর প্রশ্ন তুলেছে।প্রথমে ঘটনার পটভূমি স্মরণ করা যাক।
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের পার্কিং এলাকায় একটি সাদা হিউন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। এই হামলায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং ফুয়েল অয়েলের মিশ্রণে তৈরি শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে, যা আশেপাশের গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে যে, এটি একটি সুনির্দিষ্ট আত্মঘাতী হামলা ছিল।
ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে যে, গাড়িটি চালক ছিলেন ডা. মহম্মদ উমর, উপনাম উমর-উন-নাবী। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক ছিলেন, কিন্তু তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, তিনি পাকিস্তান ভিত্তিক জৈশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) সংগঠনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তথ্য অনুসারে, উমর ফরিদাবাদে একটি ভয়াবহ টেরর মডিউলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেখানে ২,৯৫০ কেজি বিস্ফোরক পাওয়া গেছে।
এই মডিউলে অন্তত নয়-দশজন সদস্য ছিল, যাদের মধ্যে পাঁচ-ছয়জন ডাক্তার, যারা আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন এবং চিকিৎসা পটভূমি ব্যবহার করে রাসায়নিক উপাদান সংগ্রহ করতেন।উমরের র্যাডিকালাইজেশনের গল্প আরও ভয়াবহ। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, যিনি পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা এখনও অবাক হয়ে বলছেন, “কীভাবে এমন একটি ছেলে, যে বইয়ের পাতায় মগ্ন থাকত, আতঙ্কের পথে পা বাড়াল?” তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উমরের যোগাযোগ ছিল মৌলভি ইরফান আহমেদের সঙ্গে, যিনি জেএমের মাধ্যমে তাকে মানসিকভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।
পাকিস্তানের মাসুদ আজহারের নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠী কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। উমরের হ্যান্ডলাররা তুরস্ক এবং আফগানিস্তান থেকে নির্দেশ দিত, এবং তিনি জেএমের নারী শাখা ‘জামাত-উল-মোমিনাত’-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
একটি অপ্রকাশিত ভিডিওতে উমর নিজেই বলেছেন, “আত্মঘাতী হামলা একটি ভুল বোঝাবুঝির বিষয়। এটি আসলে শহীদ হওয়ার অপারেশন।” এই ভিডিওতে তাঁর শরীরের ভাষা বিশ্লেষণ করে মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, উমর মস্তিষ্ক ধোয়া হয়েছে এবং তিনি তরুণদেরকে এই পথে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছিলেন।
