লখনউ: উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ পুরসভা ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এক সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্টে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পুরসভার মোট পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রায় ৮০ শতাংশই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিক। এই তথ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল পর্যন্ত পৌঁছতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই কর্মীদের পরিচয় যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত কয়েক বছরে লখনউ পুরসভায় বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কাজ পেয়েছেন। বেশ কিছু কর্মীর আধার, ভোটার আইডি ও প্যান কার্ড জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে, যা এখন তদন্তের আওতায় এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অবৈধ কর্মীদের বড় অংশের উৎস বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকা এবং মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে শেষে লখনউ, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও গোমতী নগর অঞ্চলে স্থায়ী হয়েছে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক কার্যকলাপ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালো ভারত!
গোয়েন্দা রিপোর্টটি হাতে আসার পর লখনউ জেলা প্রশাসন এবং পুরসভা কমিশনার যৌথভাবে পরিচয় যাচাই অভিযানে নেমেছেন। একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে, যারা প্রত্যেক কর্মীর পরিচয়পত্র, ঠিকানা ও জাতীয়তা যাচাই করছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানান “প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৪০০ জনের কাগজপত্রে গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
অনেকেই জাল ভোটার কার্ড বা অন্যের নাম ব্যবহার করেছেন।” তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে, এই অবৈধ কর্মীদের বেশ কয়েকজন স্থানীয় ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন, যারা তাদের প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে অর্থের বিনিময়ে পুরসভার কাজে যুক্ত করেছেন।
বিষয়টি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিজেপি নেতারা বলছেন, “এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। বিদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এখন সরকারি ব্যবস্থার মধ্যেই ঢুকে পড়ছে — এটা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি।” অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ, রাজ্য সরকার প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ঢাকতে “বাংলাদেশি আতঙ্ক” তৈরি করছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এই অবৈধ কর্মীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম ইতিমধ্যেই NCRB (National Crime Records Bureau)-এর নজরে এসেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা সীমান্ত পেরিয়ে মানব পাচার চক্রের মাধ্যমেও ভারতে প্রবেশ করেছে। উত্তর প্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে NIA (National Investigation Agency)-কেও তদন্তে যুক্ত করা হতে পারে।
লখনউ পুর এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, “আমরা ভাবিনি, যাঁরা আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখছেন, তাঁদের এতজন বিদেশি হতে পারেন! এটা ভয়ঙ্কর।” উত্তর প্রদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। যাচাই শেষ হলে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদেরই কাজে রাখা হবে। অবৈধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
“ভারতের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক বৈধ নথি ছাড়া সরকারি কাজে যুক্ত থাকলে সেটি গুরুতর অপরাধ। কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এই রিপোর্ট শুধু লখনউ নয়, সমগ্র উত্তর ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোর নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। এখন নজর প্রশাসনের হাতে থাকা তদন্তের ফলাফলের দিকে।


