নয়াদিল্লি, ১৬ মার্চ ২০২৫: দিল্লি পুলিশ রবিবার সকালে একজন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে (Bangladeshi Immigrant) গ্রেপ্তার করেছে, যিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। ধৃত ব্যক্তির নাম আফাজউদ্দিন গাজি, বয়স ৪০ বছর। তিনি গত ১৩ মার্চ ভোরে পুলিশের একটি টহলের সময় ধরা পড়েন। দিল্লি পুলিশ এখন তাঁর নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (ডিসিপি) সুরেন্দ্র চৌধুরী জানিয়েছেন, “আফাজউদ্দিন গাজি ২০২২ সালে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেছিল রফিক নামে একজন দালাল, যার কাছে তিনি ৪,০০০ টাকা দিয়েছিলেন।” গাজি বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মুন্সিগঞ্জ থানার সাইগুড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দিল্লির আর কে পুরম এলাকায় বসবাস করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ ভোরে আর কে পুরম থানার একটি টিম নিয়মিত টহলের সময় গাজির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে করে তাঁকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু তাঁর কাছে কোনও বৈধ পরিচয়পত্র না থাকায় পুলিশ তাঁর দাবির সত্যতা যাচাই করে। পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে এসেছেন এবং এখানে কাজের সন্ধানে থেকে গেছেন। ইন্সপেক্টর রবীন্দ্র কুমার ত্যাগীর নেতৃত্বে পুলিশ টিম তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (এফআরআরও) মাধ্যমে নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করে।
এই ঘটনা দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত কয়েক মাসে দিল্লি পুলিশ এই ধরনের একাধিক অভিযান চালিয়ে ৫০-এর বেশি অবৈধ অভিবাসীকে চিহ্নিত ও নির্বাসিত করেছে। গত ডিসেম্বরে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার নির্দেশে শুরু হওয়া একটি বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে এই কার্যক্রম চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসীরা প্রায়ই ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভারতে বসবাস করে এবং কাজের জন্য শ্রমিক, গৃহকর্মী বা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত হয়।
গাজির ক্ষেত্রে তদন্তে জানা গেছে, তিনি ভারতে প্রবেশের পর থেকে বিভিন্ন শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর বাংলাদেশি পরিচয়পত্র ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, যাতে তাঁর প্রকৃত পরিচয় গোপন থাকে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, “এই ধরনের অভিবাসীরা প্রায়ই দালালদের মাধ্যমে ভারতে আসে। তারা পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ বা ২৪ পরগনার মতো সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে এবং পরে দিল্লি বা মুম্বইয়ের মতো বড় শহরে চলে আসে।”
এই ঘটনা অবৈধ অভিবাসনের জটিল সমস্যাকে আরও একবার সামনে এনেছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেককে ভারতে কাজের সন্ধানে আসতে প্ররোচিত করে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে ৩০ জনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে নির্বাসিত করা হয়েছে।
ডিসিপি চৌধুরী জানান, “আমরা নিয়মিত ঝুগ্গি এলাকা, শ্রমিক কলোনি এবং অননুমোদিত বসতিতে অভিযান চালাচ্ছি। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। যাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই, তাঁদের এফআরআরও-তে পাঠানো হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এই অভিযানে আমরা ডেটা বিশ্লেষণ এবং গোয়েন্দা তথ্যের উপর নির্ভর করছি।”
এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি করেছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, অবৈধ অভিবাসীরা দিল্লিতে ভোটব্যাঙ্ক তৈরির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে, আম আদমি পার্টি (এএপি) কেন্দ্রীয় সরকারের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এই অভিযান শুধু আইন-শৃঙ্খলার জন্য নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।”
গাজির নির্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তাঁকে বাংলাদেশ সীমান্তে হস্তান্তর করা হবে। এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে আবার সামনে এনেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যা সমাধানে দুই দেশের মধ্যে আরও কার্যকর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জরুরি।