“নরকে যেতেও রাজি, পাকিস্তানে নয়”- বিস্ফোরক জাভেদ আখতার

বর্ষীয়ান গীতিকার, কবি ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার (Javed Akhtar) ফের একবার নিজের স্পষ্টভাষী অবস্থান দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন,…

Javed Akhtar

বর্ষীয়ান গীতিকার, কবি ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার (Javed Akhtar) ফের একবার নিজের স্পষ্টভাষী অবস্থান দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাকে যদি নরক আর পাকিস্তানের মধ্যে বেছে নিতে হয়, আমি নির্দ্বিধায় নরকে যেতে রাজি, কিন্তু পাকিস্তানে নয়।” তাঁর এই বক্তব্যে রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে।

জাভেদ আখতার বলেন, “অনেক মানুষ আমাকে উৎসাহ দেন, আমার কাজের প্রশংসা করেন। কিন্তু বাস্তবতা হল—আমি দুই দিক থেকেই আক্রমণের শিকার হই। একদল বলে আমি কাফির, আমার নরকে যাওয়া উচিত। আবার অন্যপক্ষ বলে আমি জিহাদি, আমাকে পাকিস্তানে চলে যেতে হবে। এই দুই চরম অবস্থান আমাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—নরক যদি হয় এক বিকল্প, আর অন্যটি পাকিস্তান, তাহলে আমি নরককেই বেছে নেব।”

   

দুই মেরুর চাপের মাঝখানে
জাভেদ আখতার বরাবরই নিজের মতামত প্রকাশে স্পষ্ট ও নির্ভীক। তাঁর এই বক্তব্য তুলে ধরে তিনি সমাজে চরমপন্থার দুই রূপের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন—একদিকে ধর্মীয় মৌলবাদ, যা তাঁকে “কাফির” হিসেবে দেগে দেয়; অন্যদিকে জাতীয়তাবাদের নামে তাঁকে “জিহাদি” আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এই দুই বিপরীত মতবাদই সমাজে বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করছে বলে মনে করেন আখতার।

তিনি বলেন, “আমি ভারতীয়। আমি বিশ্বাস করি সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা ও স্বাধীন মত প্রকাশে। যারা আমাকে পাকিস্তানে পাঠাতে চায়, তারা ভুলে যাচ্ছে—এই দেশই আমার জন্মভূমি, আমার পরিচয়।”

ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে এই মন্তব্য
বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক যথেষ্ট উত্তপ্ত। সাম্প্রতিক কাশ্মীর হামলা ও ভারতীয় সেনার জবাবি পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরমে। এর মাঝেই জাভেদ আখতারের এমন মন্তব্যকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা হিসেবেই দেখছেন অনেকে। তিনি এর আগেও পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছিলেন, “মুম্বই হামলাকারীরা পাকিস্তান থেকেই এসেছিল।”

Advertisements

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন
সোশ্যাল মিডিয়ায় জাভেদ আখতারের বক্তব্য ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই তাঁর সাহসিকতা ও স্পষ্টবাদিতার প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মতে, একজন মুসলিম শিল্পীর পাকিস্তান-বিরোধী স্পষ্ট অবস্থান সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী লেখেন, “জাভেদ আখতারের মতো মানুষেরা প্রমাণ করছেন, ভারতীয় মুসলমানদের পরিচয় ভারতের সঙ্গে, পাকিস্তানের সঙ্গে নয়।” আবার কেউ কেউ তাঁর বক্তব্যকে ‘অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টিকারী’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিল্পীর অবস্থান ও রাজনৈতিক বার্তা
জাভেদ আখতার শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি এক জনমত গঠনের শক্তি। তাঁর লেখনী ও বক্তব্য বহু সময়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। তাঁর এই বক্তব্য আবারও বুঝিয়ে দিল যে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতীয় মুসলমানদের কোনও আত্মিক সম্পর্ক নেই। বরং তাঁরা নিজেদের দেশের সংস্কৃতি, গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদেই গর্ববোধ করেন।

“নরকে যেতেও রাজি, পাকিস্তানে নয়”—জাভেদ আখতারের এই লাইন শুধু একটি বাক্য নয়, এটি একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান। যেখানে একদিকে তিনি মৌলবাদ ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, অন্যদিকে দেশের প্রতি নিজের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য ভবিষ্যতে আরও বড় এক বিতর্কের জন্ম দিক বা না দিক, ভারতীয় সমাজে চরমপন্থার মুখোশ যে বারবার উন্মোচন হওয়া দরকার, তা আবার প্রমাণ করে দিলেন জাভেদ আখতার।