Covid-19 in India: ভারতে কোভিড-১৯-এর কেস সংখ্যা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (ICMR) জনসাধারণকে আশ্বস্ত করেছে যে, এই মুহূর্তে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আইসিএমআর-এর মহাপরিচালক ড. রাজীব বহল জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রচলিত ভাইরাসের সাব-লিনিয়েজগুলো ওমিক্রনের উপ-ধরন এবং এগুলো কেবলমাত্র হালকা অসুস্থতার কারণ হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ভারতের কোভিড পরিস্থিতি, নতুন উপ-ধরন, এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কোভিড কেসের সর্বশেষ তথ্য
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ভারতে মোট ১,০০৯টি সক্রিয় কোভিড-১৯ কেস রয়েছে। এর মধ্যে কেরালায় সর্বাধিক ৪৩০টি কেস রয়েছে, তারপরে মহারাষ্ট্রে ২০৯টি, গুজরাটে ৮৩টি, তামিলনাড়ুতে ৬৯টি, এবং কর্ণাটকে ৪৭টি কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। দিল্লিতে সক্রিয় কেসের সংখ্যা ১০৪। এই সংখ্যা যদিও গত কয়েক সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, এই বৃদ্ধি উদ্বেগজনক নয় এবং বেশিরভাগ কেস হালকা প্রকৃতির।
ড. রাজীব বহল পিটিআই নিউজ এজেন্সিকে বলেন, “এই মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। রিপোর্ট করা সংক্রমণগুলোর তীব্রতা খুবই কম। এগুলো সাধারণ ভাইরাল অসুস্থতার মতো, যার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হালকা জ্বর, কাশি, এবং সর্দি।” তিনি আরও জানান, সমন্বিত রোগ নজরদারি প্রোগ্রাম (আইডিএসপি) এবং আইসিএমআর-এর শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস নজরদারি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
নতুন ওমিক্রন উপ-ধরন
সাম্প্রতিক কেস বৃদ্ধির জন্য চারটি ওমিক্রন উপ-ধরনকে দায়ী করা হচ্ছে: এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন.১, এবং এনবি.১.৮.১। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১-কে “ভ্যারিয়েন্টস আন্ডার মনিটরিং” হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, অর্থাৎ এগুলো নজরদারির অধীনে রয়েছে, তবে এগুলো “ভ্যারিয়েন্টস অফ কনসার্ন” বা “ভ্যারিয়েন্টস অফ ইন্টারেস্ট” নয়। ড. বহল জানিয়েছেন, এই উপ-ধরনগুলোর মধ্যে এলএফ.৭, এক্সএফজি, এবং জেএন.১ বেশি প্রচলিত, এবং ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে এগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য অঞ্চল থেকেও নমুনা সংগ্রহ করে সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে, এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।”
ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ-২ জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম (ইনসাকগ)-এর তথ্য অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে এপ্রিল মাসে এনবি.১.৮.১-এর একটি কেস এবং গুজরাটে মে মাসে এলএফ.৭-এর চারটি কেস শনাক্ত হয়েছে। জেএন.১ বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপ-ধরন, যা সিকোয়েন্স করা নমুনার ৫৩% জুড়ে রয়েছে, এবং বিএ.২ ২৬% কেসের জন্য দায়ী। এই উপ-ধরনগুলোর স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন (যেমন এনবি.১.৮.১-এর ক্ষেত্রে A435S, V445H, এবং T478I) এদের সংক্রমণ ক্ষমতা এবং ইমিউন এভেশন ক্ষমতা বাড়িয়েছে, তবে এগুলো গুরুতর অসুস্থতার কারণ হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ড. বহল জানিয়েছেন, আইসিএমআর তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর নজর রাখছে: সংক্রমণের হার, ইমিউন এভেশন, এবং অসুস্থতার তীব্রতা। তিনি বলেন, “দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে ধীরে ধীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, তবে বেশিরভাগ কেস হোম আইসোলেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে।” তিনি জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “সাধারণ সতর্কতা মেনে চললেই যথেষ্ট। বিশেষ করে ক্যানসার বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।”
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী পঙ্কজ সিংও জনসাধারণকে উদ্বেগ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালগুলোকে শয্যা, অক্সিজেন, এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, তবে এটি সাধারণ প্রস্তুতি, জরুরি পদক্ষেপ নয়।” তিনি আরও জানান, দিল্লিতে গত সপ্তাহে ২৩টি নতুন কেস রিপোর্ট করা হয়েছে, এবং বেশিরভাগ রোগী হোম আইসোলেশনে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তা
টিকাকরণের বিষয়ে ড. বহল জানিয়েছেন, বর্তমানে বুস্টার ডোজের কোনো তাৎক্ষণিক প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, “ভারতের টিকা উৎপাদনের ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী। পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে আমরা দ্রুত নতুন টিকা তৈরি করতে পারি।” ভারত এখন পর্যন্ত ২২০ কোটির বেশি কোভিড-১৯ টিকার ডোজ প্রয়োগ করেছে, যা গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক হয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট ড. অরূপ হালদার বলেন, “বুস্টার ডোজ সংক্রমণের ঝুঁকি ৫০% এবং গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি ৮০% পর্যন্ত কমাতে পারে।”
আঞ্চলিক প্রভাব এবং নজরদারি
কোভিড-১৯ কেস বৃদ্ধি শুধু ভারতেই নয়, সিঙ্গাপুর, হংকং, এবং থাইল্যান্ডের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও লক্ষ্য করা গেছে। সিঙ্গাপুরে এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কেস সংখ্যা ১১,১০০ থেকে ১৪,২০০-এ বেড়েছে, এবং এলএফ.৭ এবং এনবি.১.৮.১ এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ভারতে, ইনসাকগ-এর মাধ্যমে জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং আইডিএসপি-র মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ হাসপাতালে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছেন এবং ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
জনসাধারণের জন্য পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণকে কোভিড-সংক্রান্ত সাধারণ সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন:
- ভিড়ের জায়গায় মাস্ক পরুন।
- নিয়মিত হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত আইসোলেশনে যান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।
ভারতে কোভিড-১৯-এর সাম্প্রতিক কেস বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ না হলেও, সতর্কতা এবং প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমিক্রনের উপ-ধরন এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন.১, এবং এনবি.১.৮.১-এর কারণে সংক্রমণ বাড়লেও, এগুলোর তীব্রতা হালকা এবং বেশিরভাগ রোগী হোম আইসোলেশনে সুস্থ হয়ে উঠছেন। আইসিএমআর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কঠোর নজরদারি এবং ভারতের শক্তিশালী টিকাকরণ কর্মসূচি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছে। জনসাধারণের উচিত সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং আতঙ্ক এড়িয়ে সচেতন থাকা। ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত, এবং এই সতর্কতার সাথে আমরা কোভিড-১৯-এর এই নতুন পর্যায়টি সফলভাবে অতিক্রম করতে পারব।