ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় সিএ পরীক্ষা স্থগিত করল ICAI

ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (আইসিএআই) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা (India-Pakistan Tensions) এবং দেশব্যাপী নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সিএ ফাইনাল, ইন্টারমিডিয়েট এবং…

ICAI CA Inter and Final Exams Postponed Amid India-Pakistan Tensions

ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া (আইসিএআই) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা (India-Pakistan Tensions) এবং দেশব্যাপী নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সিএ ফাইনাল, ইন্টারমিডিয়েট এবং পোস্ট কোয়ালিফিকেশন কোর্স পরীক্ষাগুলো স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এই পরীক্ষাগুলো মূলত ৯ মে থেকে ১৪ মে, ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে আইসিএআই জানিয়েছে, দেশের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আইসিএআই-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “১৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের ইম্পর্ট্যান্ট অ্যানাউন্সমেন্ট নং ১৩-সিএ (এক্সাম)/২০২৫-এর আংশিক সংশোধনের মাধ্যমে সাধারণ তথ্যের জন্য জানানো হচ্ছে যে, দেশের উত্তেজনাপূর্ণ এবং নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির কারণে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফাইনাল, ইন্টারমিডিয়েট এবং পোস্ট কোয়ালিফিকেশন কোর্স পরীক্ষা [ইন্টারন্যাশনাল ট্যাক্সেশন – অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট (আইএনটিটি এটি)] মে ২০২৫-এর অবশিষ্ট পত্রগুলো, যা ৯ মে থেকে ১৪ মে ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।” সিএ ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপ ২-এর পরীক্ষা ৯, ১১ এবং ১৪ মে এবং সিএ ফাইনাল গ্রুপ ২-এর পত্রগুলো ৮, ১০ এবং ১৩ মে নির্ধারিত ছিল। এছাড়াও, আইএনটিটি এটি পরীক্ষা ১০ এবং ১৩ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

   

আইসিএআই জানিয়েছে, নতুন পরীক্ষার সময়সূচি যথাসময়ে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হবে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত ওয়েবসাইটে আপডেট দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত সীমান্তে চলমান উত্তেজনা এবং উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে নিরাপত্তাজনিত সতর্কতার পটভূমিতে নেওয়া হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাবের কিছু অংশ এবং রাজস্থানে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং জরুরি প্রোটোকল সক্রিয় করা হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নির্ভুল মিসাইল হামলা চালায়, যা পাহালগামে ২২ এপ্রিল ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়। এর জবাবে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার রাতে জম্মু, শ্রীনগর, পাঠানকোট, আমৃতসর, লুধিয়ানা, চণ্ডীগড়, ফালোদি এবং ভুজে ড্রোন এবং মিসাইল দিয়ে হামলার চেষ্টা করে। ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই হামলাগুলোকে ব্যর্থ করে দেয়। এছাড়াও, ভারত পাকিস্তানের লাহোর, মুলতান, সারগোধা এবং ফয়সালাবাদে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং করাচি বন্দর ধ্বংস করে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে।

এই উত্তেজনার কারণে জম্মু, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে ব্ল্যাকআউট এবং সাইরেনের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবের ছয়টি সীমান্ত জেলায়—ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা, আমৃতসর, গুরদাসপুর এবং তারন তারান—স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং রাজৌরি সেক্টরে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতির কারণে ধরমশালায় পাঞ্জাব কিংস এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের আইপিএল ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে।

ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাব

সিএ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে নিরাপত্তার কারণে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ছাত্রদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। একজন সিএ ইন্টারমিডিয়েট ছাত্র সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা স্থগিত করা সঠিক সিদ্ধান্ত, কিন্তু নতুন সময়সূচি দ্রুত ঘোষণা করা উচিত।” আরেকজন ফাইনাল পরীক্ষার্থী বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতো, তবে আমাদের পড়াশোনার গতি বজায় রাখতে হবে।”

সামাজিক মাধ্যমে আইসিএআই-এর এই সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ছাত্রদের নিরাপত্তা প্রথমে। আইসিএআই-এর এই সিদ্ধান্ত সঠিক।” তবে, কিছু ছাত্র নতুন সময়সূচির জন্য দ্রুত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। আইসিএআই জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নিরাপদ সময়ে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, ভারত দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতি দেশের শিক্ষা, ক্রীড়া এবং দৈনন্দিন জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে সিএ পরীক্ষা স্থগিত করা ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে, আইসিএআই-এর উচিত দ্রুত নতুন সময়সূচি ঘোষণা করে ছাত্রদের অনিশ্চয়তা দূর করা। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহস এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জাতীয় গর্বের বিষয় হলেও, শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর পাশে থাকতে হবে।

Advertisements