পাক সীমান্তে ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাফায়েল-মিরাজ-সুখোইয়ের গর্জন শুরু

ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) রাজস্থানে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে একটি বিশাল বিমান মহড়ার (Indian Air Force drills) আয়োজন করতে চলেছে। বুধবার রাতে জারি করা একটি নোটিশ…

IAF Conducts Major Air Drills Near Pakistan Border After Terror Attack

ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) রাজস্থানে পাকিস্তান সীমান্তের কাছে একটি বিশাল বিমান মহড়ার (Indian Air Force drills) আয়োজন করতে চলেছে। বুধবার রাতে জারি করা একটি নোটিশ টু এয়ারমেন (NOTAM) অনুযায়ী, এই মহড়া রাত ৯:৩০ টায় শুরু হবে এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলবে। এই মহড়ার জন্য সীমান্তের কাছাকাছি বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে। এই সামরিক মহড়া জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত এপ্রিলে সংঘটিত জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই হামলায় ২৬ জন, প্রধানত বেসামরিক নাগরিক, নিহত হয়েছিলেন। হামলার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) নামে একটি সংগঠনকে, যাকে পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার একটি প্রক্সি গ্রুপ বলে মনে করা হয়।

হামলার পটভূমি এবং ভারতের অভিযোগ

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসারান উপত্যকায় সংঘটিত এই জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন, যা সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলির মধ্যে একটি। ভারত সরকার দাবি করেছে যে এই হামলার পিছনে পাকিস্তানের গভীর রাষ্ট্রীয় শক্তির (deep state) হাত রয়েছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলিকে সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে এই ধরনের হামলা পরিচালিত হচ্ছে। এই ঘটনার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারত ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত করেছে, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে সমন্বিত চেকপোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় ফ্লাইটের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, যার জবাবে ভারতও পাকিস্তানি বিমানের জন্য ভারতীয় আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

   

বিমান মহড়ার তাৎপর্য

এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এই মহড়া কেবল একটি সামরিক প্রস্তুতি নয়, বরং ভারতের কৌশলগত উদ্দেশ্য এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শনের একটি শক্তিশালী বার্তা। রাজস্থানের পাক সীমান্তের কাছে অনুষ্ঠিতব্য এই মহড়ায় ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রাফাল, মিরাজ-২০০০ এবং সুখোই-৩০ এমকেআই অংশ নেবে। এই মহড়ার লক্ষ্য হল ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধক্ষমতা, নির্ভুল আক্রমণ ক্ষমতা এবং জটিল ভূখণ্ডে অভিযান পরিচালনার দক্ষতা প্রদর্শন করা। এই মহড়া ‘আক্রমণ’ নামে পরিচিত একটি পূর্ববর্তী মহড়ার ধারাবাহিকতা, যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনী উচ্চ-তীব্রতার স্থল আক্রমণ এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের মহড়া পরিচালনা করেছিল।

রাফাল জেট, যা ভারতের বিমান বাহিনীর অ্যাম্বালা এবং হাসিমারা ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছে, এই মহড়ার কেন্দ্রবিন্দু। এই ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিটিওর এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল এবং র‌্যামপেজ ও রকসের মতো দীর্ঘ-পাল্লার নির্ভুল আক্রমণ ব্যমস্থা দিয়ে সজ্জিত। এছাড়াও, মিরাজ-২০০০, যা ২০১৯ সালের বালাকোট হামলায় সফলভাবে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছিল, এবং সুখোই-৩০ এমকেআই, যা ভারতের বিমান বাহিনীর মেরুদণ্ড, এই মহড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এবং উত্তেজনা

পহেলগাঁও হামলার পর থেকে পাকিস্তানও তাদের সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী (PAF) তিনটি পৃথক মহড়া—ফিজা-ই-বদর, লালকার-ই-মোমিন এবং জারব-ই-হায়দারি—পরিচালনা করছে, যেখানে তাদের এফ-১৬, জে-১০ এবং জেএফ-১৭ জেট অংশ নিচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও লাইন অফ কন্ট্রোল (LoC) এর কাছে ‘হ্যামার স্ট্রাইক’ নামে একটি মহড়া পরিচালনা করছে। এছাড়াও, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমায় ভারতীয় ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে এবং NOTAM জারি করে আরব সাগরে নৌ-মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে ভারত পহেলগাঁও হামলার অজুহাতে ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালাতে পারে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে “কঠোর জবাব” দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে, এবং লাইন অফ কন্ট্রোলে টানা কয়েক রাত ধরে ছোটখাটো গোলাগুলি চলছে।

ভারতের কৌশলগত বার্তা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পহেলগাঁও হামলার পর সামরিক বাহিনীকে “সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” প্রদান করেছেন, যাতে তারা হামলার জবাবে সময়, লক্ষ্য এবং পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারে। এই মহড়া ভারতের এই বার্তাকে আরও জোরালো করে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি শূন্য সহনশীলতার।

এই মহড়ার সময় সীমান্তের কাছাকাছি বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত স্থানীয় বেসামরিক বিমান চলাচলে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, এটি ভারতের সামরিক প্রস্তুতির গুরুত্বকে তুলে ধরে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতারা উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজস্থানে পাক সীমান্তের কাছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এই মহড়া কেবল একটি সামরিক প্রস্তুতি নয়, বরং ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সামরিক শক্তির একটি প্রদর্শন। রাফাল, মিরাজ এবং সুখোই জেটের এই শক্তিশালী মহড়া ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এবং কৌশলগত প্রস্তুতির একটি স্পষ্ট বার্তা পাকিস্তানের কাছে পৌঁছে দেবে। তবে, এই উত্তেজনার মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উভয় দেশের সংযম এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisements